Sexual Cannibalism সাধারণত কয়েক শ্রেণীর অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ঘটে থাকে। কয়েক শ্রেণীর স্ত্রী ফড়িং (যেমন চাইনিজ ম্যানটিজ), মাকড়সা (ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার, নেফিলা), শামুক, মাছ, সাপ, ব্যাঙ তার পুরুষ সঙ্গীকে রীতিমতো খেয়েই ফেলে। তবে পুরুষ সঙ্গীও যে তার স্ত্রী সঙ্গীকে খেয়ে ফেলতে পারে এমন উদাহরণও পেয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

যৌন মিলন একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। যেখানে শারীরিক চাহিদা পূরণ ও বংশবিস্তারের একমাত্র মাধ্যম। মেরুদণ্ডী থেকে অমেরুদণ্ডী প্রায় সমস্ত উন্নত প্রাণী (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) এই প্রক্রিয়াতেই নিজেদের বংশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কিন্তু মিলনরত অবস্থায় যদি একজন অপরজনকে হঠাৎ আক্রমণ করে বসে, অথবা প্রকৃতির নিয়মকে লঙ্ঘন করে তাকে খেয়েই ফেলে, তাহলে ব্যাপারটি কেমন হতে পারে। হ্যাঁ, প্রকৃতিতে এমন ঘটনারও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যা আমাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলতে পারে।
কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এখানে স্ত্রী সঙ্গী প্রথমে যৌন মিলনের জন্য তার পুরুষ সঙ্গীকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করে। পুরুষ সঙ্গী সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তার কাছে পৌঁছায় ও মিলনের চেষ্টা শুরু করে। ঠিক এই সময় আকস্মিক স্ত্রী সঙ্গী তার পুরুষ সঙ্গীকে আক্রমণ করে বসে। পরে তাকে খেয়েও ফেলে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয়েছে Sexual Cannibalism।
কাদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে?
Sexual Cannibalism সাধারণত কয়েক শ্রেণীর অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যেই ঘটে থাকে। কয়েক শ্রেণীর স্ত্রী ফড়িং (যেমন চাইনিজ ম্যানটিজ), মাকড়সা (ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার, নেফিলা), শামুক, মাছ, সাপ, ব্যাঙ তার পুরুষ সঙ্গীকে রীতিমতো খেয়েই ফেলে। তবে পুরুষ সঙ্গীও যে তার স্ত্রী সঙ্গীকে খেয়ে ফেলতে পারে এমন উদাহরণও পেয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
কেন Sexual Cannibalism?
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় লক্ষ করেছেন, Sexual Cannibalism এর জন্য মূলত পাঁচটি কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ অভিযোজিত খাদ্য, আক্রমণাত্মক স্বভাব, সঙ্গী বাছায় ও ভুল পরিচয়।
অভিযোজিত খাদ্য
মিলনের পর স্ত্রী সঙ্গীরা তুলনামূলক বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে। তাছাড়া ডিমের বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত প্রোটিন, পুষ্টি ও শক্তি। তাই মিলনের পরই স্ত্রী সঙ্গী পুরুষদের আক্রমণ করে তাকে খেয়ে ফেলে। গার্ডেন ম্যানটিজ, চাইনিজ ম্যানটিজ, ডলোমিডিস ট্রাইটন, লাইকোশা ট্যারেন্টুলা এই শ্রেণীর পতঙ্গদের উদাহরণ।
আক্রমণাত্মক স্বভাব
এটি একটি নিষ্ঠুর Sexual Cannibalism প্রক্রিয়া। কিছু পতঙ্গের মধ্যে পুরুষের তুলনায় স্ত্রীরা সাধারণত আকারে বড় এবং অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। পিসাউরা মিরাবিলিস নামের এক শ্রেণীর স্ত্রী মাকড়সা মিলনের আগে, মিলনরত অবস্থায় বা ঠিক পরেই নিজের আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য তার পুরুষ সঙ্গীকে আক্রমণ করে বসে ও তাকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত হয়। কোনওভাবে যদি পরুষ সঙ্গী পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। বলা বাহুল্য, নিষ্ঠুর এই প্রক্রিয়ার জন্যই প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
সঙ্গী বাছায়
এই Sexual Cannibalism -ও অনেকটা নিষ্ঠুর একটি প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে মিলনরত অবস্থায় বা মিলনের ঠিক আগে স্ত্রী সঙ্গী যদি কোনও কারণে তার পুরুষ সঙ্গীকে পছন্দ না করে তবে তাকে আক্রমণ করে বসে। এ বিষয়ে স্ত্রী সঙ্গী বিশেষভাবে লক্ষ করে তার পুরুষ সঙ্গীর আকার, স্বাস্থ্য ও শারীরিক গঠন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সুস্থ-সবল সন্তান ধারণের জন্যই সাধারণত স্ত্রীরা এই পন্থা অবলম্বন করে থাকে। এই Sexual Cannibalism দেখা যায় অরব ওয়েব, লিউকেজ মারিয়ানা প্রজাতির মাকড়সাদের মধ্যে।
ভুল পরিচয়
অনেক সময় নিজের সঙ্গীকেই চিনতে ভুল করে ফেলে স্ত্রী সঙ্গী। মিলনের আগে বা পরে স্ত্রী সঙ্গী এই নিষ্ঠুর কাজটি করে বসে। স্ত্রী সঙ্গী যৌন মিলনের জন্য তার পুরুষ সঙ্গীকে আহ্বান করলে পুরুষ সঙ্গী তার নিকটে পৌঁছালেও স্ত্রী সঙ্গী তাকে প্রত্যাখ্যান করতে চায়। পুরুষ সঙ্গী জোর করলে স্ত্রী সঙ্গী তাকে আক্রমণ করে বসে, অনেক সময় খেয়েও ফেলে তাকে।
Sexual Cannibalism মেরুদণ্ডীদেরও ঘটতে পারে
তবে Sexual Cannibalism যে শুধু অমেরুদণ্ডীদের মধ্যেই ঘটবে এমন কোনও কথা নেই। কিছু মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যেও ঘটতে পারে। কয়েক শ্রেণীর সাপ, মাছ এমনকি ব্যাঙের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের কুরাগ্যাং দ্বীপে এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন পরিবেশবিদ জন গোল্ড। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক। জন গোল্ড ওই দ্বীপে বেল প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে Sexual Cannibalism লক্ষ করেছেন। তাঁর গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, মিলনের জন্য স্ত্রী ব্যাঙ পুরুষ সঙ্গীকে প্রথমে আহ্বান করে। পরে মিলনের পরেই পুরুষ সঙ্গীকে আক্রমণ করে বসে স্ত্রী সঙ্গী। এমনকি মিলনের ঠিক আগের মুহূর্তে বা মিলনরত অবস্থাতেও পুরুষ সঙ্গীকে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে স্ত্রী সঙ্গীকে।