Christmas Island অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বছরের প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়। নতুন বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই লাল কাঁকড়া-রা দল বেধে চলতে শুরু করে সমুদ্রের দিকে। কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তাদের কয়েক দিন এমনকি সপ্তাহ-ও পেরিয়ে যেতে পারে। চলার পথে পড়তে পারে বন, মাঠ, জলাশয়, শহরের কোলাহল, ব্যস্ত পাকা রাস্তা, ব্রিজ। শিকারি পাখি বা পশুও এই সময় থাকে ওত পেতে। কিন্তু কোনও বাধা-ই তাদের থামিয়ে রাখতে পারে না।

বছরের এই সময়টা এখানে এরকম ঘটেই থাকে। চলতি পথে থমকে পড়ে গাড়ি। মানুষের চলাচলের উপরেও নেমে আসে বিধিনিষেধ। কারণ এই সময় পথ চলে লাল কাঁকড়ার দল। একটি-দুটি নয় বা কয়েক হাজারও নয়। এক সঙ্গে কয়েক কোটি লাল কাঁকড়া ঝাঁক বেধে চলতে থাকে নির্দিষ্ট দিকে। তাদের এই যাওয়া-আসার সুবিধার জন্যেই প্রশাসনের পক্ষ দেওয়া হয়েছে এক গুচ্ছ বিধিনিষেধ। সেই সঙ্গে চলার পথে লাল কাঁকড়াদেরও দেওয়া হয়েছে একাধিক সুবিধা।
আসলে এই ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়ার Christmas Island -এর। অস্ট্রেলিয়ার অধীনে থাকলেও এই দ্বীপটির অবস্থান মূল দেশ থেকে প্রায় ১৬৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। বরং উত্তরের জাভা বা সুমাত্রা এই দ্বীপটি থেকে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার দূরে। দ্বীপটিতে মানুষের বসবাস প্রায় ২ হাজারের কিছু বেশি। তারা অধিকাংশই এশিয়ান বংশোদ্ভুত। এই দ্বীপের উত্তরাংশের কিছু অঞ্চল জুড়ে তারা বসবাস করছে।
Christmas Island -এর আয়তন প্রায় ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। যার অধিকাংশ অঞ্চলই জঙ্গলাকীর্ণ। আর এই জঙ্গলই এই দ্বীপের জাতীয় উদ্যান। জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ লাল কাঁকড়া। বছরের অন্য সময়ে তারা দল বেধে জঙ্গলের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে। কিন্তু অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে তাদের জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়। কারণ এটাই তাদের প্রজননের সময়।
Christmas Island অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বছরের প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়। নতুন বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই লাল কাঁকড়া-রা দল বেধে চলতে শুরু করে সমুদ্রের দিকে। কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তাদের কয়েক দিন এমনকি সপ্তাহ-ও পেরিয়ে যেতে পারে। চলার পথে পড়তে পারে বন, মাঠ, জলাশয়, শহরের কোলাহল, ব্যস্ত পাকা রাস্তা, ব্রিজ। শিকারি পাখি বা পশুও এই সময় থাকে ওত পেতে। কিন্তু কোনও বাধা-ই তাদের থামিয়ে রাখতে পারে না।
দলের পুরুষ কাঁকড়া-রা পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় স্ত্রীদের। সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে পুরুষেরা গর্ত খোঁড়ে সমুদ্রের অগভীর জলে। তারপর চেনা পথ ধরে আবার ফিরে যায় জঙ্গলের দিকে। তবে স্ত্রীদের থেকে যেতে হয় প্রায় ২-৩ সপ্তাহ। কারণ পুরুষদের খুঁড়ে রাখা গর্তে ওই সময় ডিম পাড়ে তারা। ডিম দেওয়া হলে স্ত্রীরাও পরে ফিরে যায় জঙ্গলের দিকে। সেই ডিম ফুটে ২৫-২৮ দিন পর কোটি কোটি নতুন লাল কাঁকড়ার জন্ম হয়। তারা সমুদ্রে আরও কিছুদিন কাটিয়ে অবশেষে পিতা-মাতার সন্ধানে চলতে শুরু করে জঙ্গলের দিকে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। মোটামুটি ওই সময় পর্যন্ত লাল কাঁকড়া-দের চলাচলের সুবিধার্থে Christmas Island প্রশাসন জনসাধারণের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সড়ক চলাচল। সেই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কৃত্রিমভাবে বানিয়ে দেওয়া হয় চলাচলের পথ, ওভারব্রিজ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, Christmas Island -এ প্রায় পাঁচ কোটিরও বেশি লাল কাঁকড়া বসবাস করছে। যদিও প্রতি বছর এই সময় পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন কারণে কয়েক লক্ষ লাল কাঁকড়ার মৃত্যু হয়।