প্রথম দিকে অবশ্য চিরুলিয়ার এই লক্ষ্মী পুজো সার্বজনীন ছিল না। সমগ্র গ্রামের আর্থিক সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মুষ্টিমেয় কিছু গ্রামবাসীর উদ্যোগে ১৮৭০ সাল নাগাদ তালপাতার ছাউনি দেওয়া ঘরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তখন এই গ্রামে প্রায় ১২টি পরিবারের বসতি ছিল। এরপর ১৯৬০ সাল নাগাদ গ্রামবাসীরা কিছু অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করে একটি পাকা মন্দির। যেখানে আজও পুজো হয়ে চলেছে দেবী লক্ষ্মীর।

করোনা মহামারীর কোপে পড়ে এমনিতেই বঙ্গ সহ সমগ্র ভারতের অর্থনীতি বেশ দুর্বল এখন। বঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া দুর্গা পুজোতেও তাই তেমন আলোড়ন লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক স্থানে আবার প্রায় ‘জলে-ফুলে’-ই সারতে হয়েছে এই দুর্গা পুজো। দুর্গোৎসবের সমাপ্তির পর এবার হাজির হয়েছে ধনের দেবী মা লক্ষ্মী। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তাই বিশেষ প্রার্থনা অবশ্যই থাকবে দেবী লক্ষ্মীর কাছে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো বরাবরই ঘরোয়া পুজো হয়েই এসেছে। বড়ো কোনও আয়োজনেরও প্রয়োজন হয় না। বাংলার প্রায় প্রতিটি ঘরে আশ্বিনের কোজাগরী পূর্ণিমায় বিশেষভাবে আয়োজন করা হয় এই পুজোর।
তবুও কিছু স্থানে সমস্ত অঞ্চলবাসী মিলেও আয়োজন করতে দেখা যায় এই লক্ষ্মী পুজো র। আবার কিছু অঞ্চলে বেশ ব্যতিক্রমী ঢঙেও চলে লক্ষ্মীর আরাধনা। তেমনই একটি অঞ্চল বীরভূম জেলার ভ্রমরকোল গ্রাম-পঞ্চায়েতের চিরুলিয়া। কৃষিপ্রধান এই প্রত্যন্ত গ্রামটিতে প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে এই সার্বজনীন লক্ষ্মী পুজো। পুজো একদিনের হলেও চার দিন ধরে চলে পুজোর মেজাজ। আট থেকে আশি প্রায় সকলেই মেতে থাকে পুজোর এই চারটে দিন।
প্রথম দিকে অবশ্য চিরুলিয়ার এই লক্ষ্মী পুজো সার্বজনীন ছিল না। সমগ্র গ্রামের আর্থিক সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মুষ্টিমেয় কিছু গ্রামবাসীর উদ্যোগে ১৮৭০ সাল নাগাদ তালপাতার ছাউনি দেওয়া ঘরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তখন এই গ্রামে প্রায় ১২টি পরিবারের বসতি ছিল। এরপর ১৯৬০ সাল নাগাদ গ্রামবাসীরা কিছু অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করে একটি পাকা মন্দির। যেখানে আজও পুজো হয়ে চলেছে দেবী লক্ষ্মীর। পুজোর খরচ চালাতে গ্রামের দুলাল সাহা, রসময় সাহা, বিশ্বনাথ বাগদি, অমূল্যরতন বাগদি সহ মোট ১২ জন গ্রামবাসী এই পুজোর জন্য দেবত্তোর সম্পতির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে দেবী লক্ষ্মীর নামে প্রায় ১২ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। প্রতি বছর সেখান থেকেই পুজোর খরচ চলে আসে।
এখানে লক্ষ্মী প্রতিমাতেও বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। লক্ষ্মীর পাশে এখানে নারায়ণকেও স্থান দেওয়া হয়েছে প্রথম থেকেই। তবে ব্যতিক্রমী ঢঙে লক্ষ্মী-নারায়ণের পাশে একই সঙ্গে পুজো করা হয় হর-পাবর্তীকেও। গ্রামবাসীদের কথায়, যেহেতু আলাদা করে দুর্গা পুজো হয় না এই গ্রামে, তাই হর-পার্বতীকে পুজো দেওয়া হয় দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গেই। এছাড়াও দু’পাশে জয়া ও বিজয়া এবং নারায়ণের বাহন গরুড় পাখিকেও স্থান দেওয়া হয়েছে।
এই গ্রামের লক্ষ্মী পুজো পরিচলনার দায়িত্বে থাকে ‘চিরুলিয়া লক্ষ্মী মাতা যুব সংঘ’। এই সংঘের সদস্য রনজিৎ সাহা, সমর সাহা, বিকাশ সাহা-রা জানালেন, ‘আমাদের চিরুলিয়া গ্রামের একমাত্র উৎসব এই লক্ষ্মী পুজো। বেশ ধূমধাম করেই প্রতি বছর আয়োজন করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য এবছর কিছুটা ম্লান হয়েছে এই উৎসব। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ মেলা ও সেই সঙ্গে যাত্রাপালা অন্যান্য বছর আয়োজন করা হলেও এবছর তা সম্ভব হয়নি। উৎসবের সমস্ত কিছুরই আয়োজন করা হয়েছে প্রশাসনিক নির্দেশনামা মেনে।’