১৫৫২ সালে এই গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার এর আবির্ভাব ঘটলে ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তা গ্রহণ করতে শুরু করে। কিন্তু ইংল্যান্ডের এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করতে লেগে যায় প্রায় ২০০ বছর। একের পর এক ইউরোপীয় দেশ গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করাই ইংল্যান্ডের পক্ষে তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দিতে থাকে। ফলে তারাও ১৭৫২ সাল নাগাদ জুলীয় ক্যালেন্ডার এর পরিবর্তে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।

সময়ের হিসাব নিখুঁত করতে ও সর্বসাধারণের সুবিধার জন্য বহুবার বদলে ফেলা হয়েছে ক্যালেন্ডার। সে যে কোনও ক্যালেন্ডার ই হতে পারে। এক্ষেত্রে অতি প্রচলিত ক্যালেন্ডারেও বদল ঘটানো হয়েছে। তবে সেই অদল-বদলে সময় বা দিনের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
তবে ১৭৫২ সালে ইংল্যান্ড তাদের ক্যালেন্ডার এ অনেক বড়ো একটি পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। যা কিনা এক রাতের মধ্যেই মুছে ফেলা হয়েছিল ১১টি দিন-কেই। এত বড়ো পরিবর্তন সচরাচর ঘটেনি আর কোনও সময়ে। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখের পর টেনে আনা হয়েছিল ১৪ তারিখ-কে। মাঝের ৩ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ১১টি দিন সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল ক্যালেন্ডার থেকে।
কিন্তু কেন? আসলে ক্যালেন্ডার এ এই পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল সময়কে আরও নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে। সে সময়ে ইংল্যান্ড জুলীয় ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত। যা কিনা ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রবর্তিত ছিল। এই ক্যালেন্ডার এ বছর গণনা করা হত ৩৬৫ দিনেই। জানুয়ারি, মার্চ, মে, জুলাই, আগস্ট, অক্টোবর ও ডিসেম্বর ছিল ৩১ দিনের এবং এপ্রিল, জুন, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর ছিল ৩০ দিনের। আর অধিবর্ষের ক্ষেত্রে ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করা হত।
কিন্তু অনেক পরে সময়ের হিসাব ক্ষেত্রে দেখা গেল এই ক্যালেন্ডার ছিল প্রকৃত সময়ের থেকে ১১ সেকেন্ড কম। যা প্রতি ৪০০ বছরে ৩ দিন কমে যাচ্ছে। এই হিসাব আরও নিখুঁত করতে ১৫৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রোগোরির নির্দেশে জুলীয় ক্যালেন্ডার এর সংস্করণ ঘটিয়ে এক নতুন ক্যালেন্ডারের আবির্ভাব ঘটে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর গণনা শুরু হয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে। যদিও ১২ মাসের প্রতিটির দিন সংখ্যা ও অধিবর্ষ জুলীয় ক্যালেন্ডার এর মতোই স্থির রাখা হয়।
১৫৫২ সালে এই গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার এর আবির্ভাব ঘটলে ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তা গ্রহণ করতে শুরু করে। কিন্তু ইংল্যান্ডের এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করতে লেগে যায় প্রায় ২০০ বছর। একের পর এক ইউরোপীয় দেশ গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করাই ইংল্যান্ডের পক্ষে তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দিতে থাকে। ফলে তারাও ১৭৫২ সাল নাগাদ জুলীয় ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
ইংল্যান্ড ১৭৫২ সালের ২ সেপ্টেম্বরের পর তাদের ক্যালেন্ডার এর পরিবর্তন ঘটায়। তবে ওই দিন পর্যন্ত সময়ের হিসাবে জুলীয় ক্যালেন্ডার গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার এর থেকে ১১ দিন পিছিয়ে ছিল। তাই ২ সেপ্টেম্বরের পর ইংল্যান্ড তাদের নতুন ক্যালেন্ডার এ ১৪ সেপ্টেম্বর নিয়ে আসে। মাঝের ৩ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এই ১১ দিন-কে সম্পূর্ণভাবে মুছে দেওয়া হয়েছিল।