এবছর ছিল ১৬৯তম হুল দিবস। গত ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ধান্যসড়া গ্রামে চলেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মানুষেরা। অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন কানন হাসদা, বুদ্ধদেব হাসদা, বুধি মুরমু, সোমনাথ মুরমুর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তি।

গত ৩০ জুন ছিল হুল দিবস। ১৮৫৫ সালের এই দিনেই সূত্রপাত ঘটেছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রথম কোনও বড় সশস্ত্র সংগ্রামের। দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে স্বাধীন ভারতে প্রতি বছর ৩০ জুন হুল দিবস পালন করে সাঁওতাল সম্প্রদায় সহ সমগ্র ভারতবাসী।
এই উপলক্ষেই প্রতি বছর বীরভূম জেলার বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক অঞ্চলের ধান্যসড়া গ্রামের হুল মাঠে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবছর ছিল ১৬৯তম হুল দিবস। গত ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ধান্যসড়া গ্রামে চলেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মানুষেরা। অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন কানন হাসদা, বুদ্ধদেব হাসদা, বুধি মুরমু, সোমনাথ মুরমুর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তি।
এছাড়াও ১ জুলাই স্থানীয় দীপশিখা সাহিত্য গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে একটি একদিনের কবিতাপাঠ ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল এখানে। অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন বীরভূম জেলার পাশাপাশি সুদূর কলকাতার একাধিক কবি-সাহিত্যিক। উপস্থিত ছিলেন দীপশিখা সাহিত্য গোষ্ঠীর সম্পাদক চিরন্তন দাস সহ পার্থ সূত্রধর, রঞ্জন সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সাঁওতালী ভাষায় হুল কথার অর্থ বিদ্রোহ। ব্রিটিশ ভারতে দিনের পর দিন চলা অসহনীয় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা ১৮৫৫ সাল নাগাদ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধ এক সুবিশাল বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন একই পরিবারের চার ভাই, দুই বোন অর্থাৎ সিধু, কানহু, বিরসা চাঁদ, ভৈরব, ফুলমণি ও ঝানু মুরমু। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে বর্তমানে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার ভবানীডিহির মাঠে প্রায় ৫০০ গ্রামের ৬০ হাজার মানুষ একত্রিত হয়। ওই দিনই ঘোষণা হয় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এক মহা বিদ্রোহ অর্থাৎ হুল-এর। বলা বাহুল্য, এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রথম কোনও বড় আন্দোলন।
বিদ্রোহের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকারের মদতপুষ্ট লেঠেল বাহিনী বিভিন্ন উপায়ে এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ সরকার সরাসরি সক্রিয় হয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এই বিদ্রোহ দমন করে। সিধু মুরমু এই বিদ্রোহে সম্মুখ সমরে প্রাণ হারান। কানহু মুরমুকে ব্রিটিশ সরকার জনসমক্ষে ফাঁসি দেয়। এছাড়াও ফুলমণি মুরমুকে ব্রিটিশ সেনা নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৩০ জুন অর্থাৎ হুল দিবস তাই শুধুমাত্র সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছেই নয়, সমগ্র ভারতবাসীর কাছেই এক চিরস্মরণীয় দিবস।