মৌমাছিদের খাবার সংগ্রহও অনেকটা হিসাব কষে চলে। কোনও একটি মৌচাক থেকে খাদ্যের উৎসে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে তারা যাতায়াতের পথের দূরত্ব মাপতে পারে। এক্ষেত্রে তারা পথের বিভিন্ন নিশানকে লক্ষ্য রেখে পথ চলে। বড়ো বন্য প্রাণী, যারা দল বেঁধে শিকার করতে অভ্যস্ত, তারাও সংখ্যা হিসাব কষে শিকার করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে বিবিসির ওই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, একটি বড়ো বাইসন শিকার করতে একটি দলে ৯-১৩টি নেকড়ের প্রয়োজন হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিশ্বে সমস্ত কিছুই চলছে হিসাব কষে। হিসাবের সামান্যতম ভুল মানেই বড়ো রকমের নষ্ট হতে পারে অনেক কিছুই। আর এই হিসাবের অন্যতম বড়ো আধার হল সংখ্যা। এই পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র জীব, যারা সংখ্যার লিখিত রূপ প্রকাশ করতে পেরেছে এবং সেই সংখ্যা দিয়ে জটিল থেকে জটিলতর অঙ্কের হিসাব কষতে পেরেছে। তবে সংখ্যা ব্যবহারের ক্ষমতা মানুষ কিন্তু তার ভাষা থেকে পায়নি, পেয়েছে জৈব উত্তরাধিকার সূত্রে।
কিন্তু সংখ্যা বোঝা বা হিসাব কষার ক্ষমতা কি শুধুমাত্র মানুষেরই রয়েছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না, অন্য অনেক প্রাণীদেরও এই বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যা তারা জৈব উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়ে থাকে। সম্প্রতি বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পরিবেশে টিকে থাকার জন্য সংখ্যা বোঝার ক্ষমতা প্রাণীদের একটি বড় সুবিধা এনে দেয়। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, শিকার ধরা, নিজেকে শিকারির থেকে বাঁচানো, আবাসভূমিতে পথ তৈরি করা, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রভৃতির ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা বোঝার ক্ষমতা অনেক বড় সুবিধা এনে দেয়।
ওই রিপোর্টে এই বিষয়ে অনেকগুলি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বোঝার ক্ষমতা। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়াও সংখ্যার ধারণা করতে পারে। ভিব্রিও ফিসেরি নামের এক ধরণের সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া নিজেদের শরীর থেকে জোনাকির মতো আলো ছড়াতে পারে। তবে যখন তারা একাকি থাকে, তখন আলো ছড়ানোর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সেই সংখ্যা যখন একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে পৌঁছোই, তখন তারা এক সঙ্গে আলো ছড়াতে শুরু করে। তারা সংখ্যার এই হিসাবটি কষতে পারে জলে রাসায়নিক অণু নিঃসরণ করে।
এক ধরণের জাপানি পিঁপড়ের ওপর গবেষণা করে জানা গিয়েছে, তাদেরও সংখ্যা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। তাদের কোনও একটি কলোনির সংখ্যা যদি নির্দিষ্ট অঙ্কে পৌঁছোই, তাহলে তারা নতুন স্থানে গিয়ে নিজেদের বসতি গড়তে থাকে।
মৌমাছিদের খাবার সংগ্রহও অনেকটা হিসাব কষে চলে। কোনও একটি মৌচাক থেকে খাদ্যের উৎসে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে তারা যাতায়াতের পথের দূরত্ব মাপতে পারে। এক্ষেত্রে তারা পথের বিভিন্ন নিশানকে লক্ষ্য রেখে পথ চলে।
বড়ো বন্য প্রাণী, যারা দল বেঁধে শিকার করতে অভ্যস্ত, তারাও সংখ্যা হিসাব কষে শিকার করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে বিবিসির ওই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, একটি বড়ো বাইসন শিকার করতে একটি দলে ৯-১৩টি নেকড়ের প্রয়োজন হয়।
পাখিদের মধ্যে এমন অনেক পাখি রয়েছে, যাদের খুবই ভালো রকম সংখ্যার ধারণা রয়েছে। আমেরিকান কুট নামের এক প্রজাতির পাখি ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করার মতো কষ্টকর পদ্ধতি অবলম্বন না করে অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে আসে। ঠিক যেন বঙ্গদেশের কোকিলের মতো। কিন্তু এক্ষেত্রে আমেরিকান কুটের প্রতিবেশী অন্য পাখিরাও বেশ সজাগ থাকে এবিষয়ে। তারাও তাদের বাসার ডিমগুলি গুণে রাখে পূর্ব থেকেই, যাতে কোনওভাবেই নিজের ডিমের সঙ্গে আমেরিকান কুটের ডিম মিশে না যায়।