Thursday, April 10, 2025

সুগন্ধি ফুল : যে ফুলগুলির কোনও বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না

- Advertisement -

সুগন্ধি ফুল এর বিশেষ রকম আচরণে শুধুমাত্র কীটপতঙ্গ নয়, মানুষেরাও বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ফুল আবার জায়গা করে নেয় মানব জগতের শখের বাগানে অথবা ঘরের কোণে রাখা কোনও ফুলদানিতে। এখানে রঙের থেকে সুগন্ধকেই মানুষ প্রাধান্য দিয়ে থাকে বেশি। বঙ্গদেশের এই রকমই কিছু সুগন্ধি ফুল ও তাদের পরিচয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে।


সুগন্ধি ফুল
Image by hartono subagio from Pixabay

ফুল হল গাছের সবচেয়ে সুন্দর অংশ। প্রজননে অংশ নেওয়ার জন্যই মূলত গাছেদের এই ফুল ফোটা। একটি গাছ যখন সব দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে, তখন তার প্রধান কাজ হয় বংশ বৃদ্ধি ঘটানো। আর এই কাজ ফুল ফোটানোর মাধ্যমেই তাকে করতে হয়। তবে সব গাছে যে ফুল ফুটবে, এমন কোনও কথা নেই। এবিষয়ে কিছু বিকল্প গাছও রয়েছে প্রকৃতিতে।

সাধারণত দিনের আলোতে ফোটা ফুলগুলির রঙ হয়ে থাকে রঙিন। আর রাতের ফুলগুলি হয় সাদা। রঙিন ফুলগুলি গন্ধ ছড়ায় কম। তবে সাদা ফুলগুলির অধিকাংশই হয়ে থাকে সুগন্ধ যুক্ত। কীটপতঙ্গদের পরাগসংযোগে অংশগ্রহণ করাতে ফুলের এই রকম আচরণ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

তবে এক্ষেত্রে ফুলের এই বিশেষ রকম আচরণে শুধুমাত্র কীটপতঙ্গ নয়, মানুষেরাও বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ফুল আবার জায়গা করে নেয় মানব জগতের শখের বাগানে অথবা ঘরের কোণে রাখা কোনও ফুলদানিতে। এখানে রঙের থেকে সুগন্ধকেই মানুষ প্রাধান্য দিয়ে থাকে বেশি। বঙ্গদেশের এই রকমই কিছু সুগন্ধি ফুল ও তাদের পরিচয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

হাসনুহানা

বঙ্গদেশে যতরকম সুগন্ধি ফুল রয়েছে, তাদের প্রথম সারির উপরের দিকেই থাকবে ‘রাতের রাণী’ হাসনুহানা বা হাসনাহেনা। এই ফুলের অনেকগুলি ইংরেজি নাম থাকলেও সবচেয়ে বেশি ডাকা হয় ‘Lady of the night’ নামে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cestrum noctumum। হাসনুহানা মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ভারত বা বঙ্গদেশে এসেছে। এর মন মাতানো উত্তাল গন্ধের জন্য একাধিক কবি বা লেখকের কলমে উঠে এসেছে বারবার। বলা হয় একটি পাড়া মাতাতে একটি মাত্র হাসনুহানা গাছই যথেষ্ট। যদিও এটি দেখতে খুবই একটি সাদামাটা ফুল। গ্রীষ্ম ও বর্ষার মরশুমেই এই ফুল বেশি ফুটতে দেখা যায়।

- Advertisement -

কামিনী

হাসনুহানার মতই রাতের অন্ধকারে উগ্র সুগন্ধ ছড়াতে পারে কামিনী। তবে কামিনীর সুগন্ধ হাসনুহানার মত অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। এরও একাধিক ইংরেজি নাম রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নাম Orange jasmine। কামিনী মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় একটি সুগন্ধি ফুল। এছাড়াও গুল্ম জাতীয় এই গাছ চিন ও অস্ট্রেলিয়াতেও জন্মাতে দেখা যায়। প্রায় সারা বছর ধরেই কামিনী ফুল ফুটিয়ে তার সুগন্ধ ছড়াতে পারে।

রজনীগন্ধা – রজনীগন্ধার সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সুগন্ধি ফুল এর মধ্যে এই ফুলের জনপ্রিয়তাও সবচেয়ে বেশি। বঙ্গদেশের যে কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠানে রজনীগন্ধার উপস্থিতি রয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিচার করে এখন তো বিঘার পর বিঘা জমিতে রীতিমতো রজনীগন্ধার চাষ করা হয়। ছোটো বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ এটি। শীতের মরশুম ছাড়া বছরের অন্য যে কোনও সময়ে এই ফুল অধিক পরিমাণে ফুটে থাকে।

বেল ও জুঁই

বেলি বা বেল ফুলের সঙ্গে জুঁই বা যূথী ফুলের পার্থক্য অতি সামান্য। উভয় গাছই গুল্ম জাতীয় লতানে গোছের হয়ে থাকে। তবে ফুল দেখে গাছ দুটিকে আলাদা করা সম্ভব। সাদা থোকা থোকা এই দুই রকম সুগন্ধি ফুল ই মন টেনে নেবে যে কারোরই। জুঁই ফুলের পাপড়ি বেল ফুলের তুলনায় বেশ কিছুটা সরু হয়ে থাকে। জুঁই ফুলের ইংরেজি নাম Jasmine। আর বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum। অপরদিকে বেল ফুলের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Arabian jasmine ও Jasminum sambac।

বকুল

একটি সুবৃহৎ বকুল গাছ যখন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে, তখন যে কোনও পথিকই পথ চলার অবসরে তার সুনিবিড় ছায়ায় দুদণ্ড বিশ্রাম নিতে চায়। এমনই এই সুগন্ধি ফুল এর মহিমা। বাতাসে বহু দূর পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে বকুল ফুলের সুঘ্রাণ। এমনকি ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরেও বহুদিন পর্যন্ত থেকে যায় এই ফুলের মিষ্টি গন্ধ। খুব ছোট্ট ছোট্ট সাদা এই ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথতে মন চাই না এমন বালিকা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চিরহরিৎ এই বৃক্ষ জাতীয় ফুল গাছটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব উদ্ভিদ। এছাড়াও পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে এই গাছের উপস্থিতি রয়েছে। এই ফুলের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Bullet wood ও Mimusops elengi।

শিউলি

বঙ্গদেশের নিজস্ব ফুলগুলির মধ্যে অন্যতম শিউলি। শরতের ভোরের বাতাস সুবাসে ভরিয়ে তুলতে শিউলি একাই যথেষ্ট। সাদা পাপড়ি ও লালচে কমলা বোঁটা বিশিষ্ট এই ফুলটি শরতের মরশুমে রাতের অন্ধকারে ফুটলেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে ঝরে পড়ে। খুব বেশি বড়ও হয় না এই ফুলের গাছ। শিউলি বঙ্গদেশে শেফালি, পারিজাত, রাগাপুস্পি, প্রজক্তা নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে এই ফুলের নাম Night-flowering jasmine বা Harsingar। বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis।

দোলনচাঁপা

দোলনচাঁপা ভারতের নিজস্ব ফুল। হিমালয়ের পাদদেশ এই ফুলের আদি নিবাস। এখন অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি কিউবার জাতীয় ফুলের মর্যাদাও পেয়েছে দোলনচাঁপা। আদা গাছের মতো বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এই ফুলের গাছ ১-২ মিটারের বেশি লম্বা হয় না। শীতের মরশুমে গাছ মরে যায়। ফুল ফোটার আদর্শ সময় গ্রীষ্ম থেকে শরৎ। এই সময় ডালের অগ্রভাগে গোছা গোছা সাদা ফুল ফুটতে দেখা যায়। দূর থেকে এই ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় না। কিন্তু কাছে গেলে মন মাতানো হালকা মিষ্টি গন্ধ নাকে আসে। দোলনচাঁপার ইংরেজি নাম Butterfly ginger lily। বৈজ্ঞানিক নাম Hedychium coronarium।

গন্ধরাজ

বঙ্গদেশের নিজস্ব ও অতি পরিচিত সুগন্ধি ফুল গন্ধরাজ। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ এটি। গ্রীষ্ম থেকে শরৎ এই গাছে ফুল ফোটার আদর্শ সময়। ফুলের আকার বেশ বড়। অনেকটা গোলাপ ফুলের মতো। হালকা মিষ্টি গন্ধ জড়িয়ে রয়েছে গন্ধরাজের গায়ে। ইংরেজিতে এই ফুলকে বলা হয় Gardenia। বৈজ্ঞানিক নাম Gardenia jasminoides।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর