দুর্ঘটনার পর পৃথিবীর খাদ্যচক্র সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। আর সেই সঙ্গে জীবনচক্র টিকে থাকার উপরেও দেখা দিয়েছিল বড়ো প্রশ্ন চিহ্ন। তা সত্ত্বেও কিছু প্রজাতির সাপ টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ তারা খাদ্য ছাড়ায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারতো। আর সেই সঙ্গে মাটির নীচেও নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারতো। ওই দুর্ঘটনার পরেই তারা ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল আয়ত্তের পর সাপ দের বিবর্তন ঘটতে থাকে।

অতীতে ডাইনোসর কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। কারণ কোটি কোটি বছর আগে ঘটা কোনও ঘটনার নিখুঁত সূত্র পাওয়া বেশ মুশকিল। বিভিন্ন সময়ে একাধিক গবেষক তাঁদের গবেষণায় এক এক ধরণের বিবরণ তুলে ধরেছেন। তবে গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসরের বিলুপ্তির বিবরণটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ও যুক্তিসঙ্গত।
গবেষকদের ধারণা, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে বিশালাকার কোনও এক গ্রহাণু তীব্র গতিতে আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর ওপর। যার ফলে ভূমিকম্প বা সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল পৃথিবীর পরিবেশ। গবেষকরা তাঁদের যুক্তিতে তুলে ধরেছেন, সেই গ্রহাণুটি চওড়ায় ছিল প্রায় ১২ কিলোমিটার এবং সেটি আছড়ে পড়েছিল বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপ অঞ্চলে।
এই সংঘর্ষের ফলে যে পরিমাণ ছাই উৎপন্ন হয়েছিল, তা ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। এই ছাইয়ে পৃথিবীর আকাশ সম্পূর্ণ ঢাকা ছিল প্রায় কয়েক দশক পর্যন্ত। ফলে তাপমাত্রা গড়ে ২৫ ডিগ্রী হারে নেমে গিয়েছিল। পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানের তাপমাত্রা সেসময়ে শূন্য ডিগ্রীর নীচে ছিল। এত শীতলতায় বেঁচে থাকা ছিল দুরূহ। ফলে ধ্বংস হয়ে যায় ডাইনোসর সহ পৃথিবীর প্রায় ৭৬ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী।
টিকে থাকা ২৪ শতাংশের মধ্যে ছিল কিছু প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপ। এই সরীসৃপের মধ্যে অন্যতম ছিল সাপ। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, ব্রিটেনে চলা একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিপর্যয়ের পরেও অভিনবভাবে টিকে ছিল সাপ। শুধু তাই নয়, ওই বিপর্যয়ের পরেই সাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে।
কীভাবে টিকে ছিল সাপ? বিবিসির ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার পর পৃথিবীর খাদ্যচক্র সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। আর সেই সঙ্গে জীবনচক্র টিকে থাকার উপরেও দেখা দিয়েছিল বড়ো প্রশ্ন চিহ্ন। তা সত্ত্বেও কিছু প্রজাতির সাপ টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ তারা খাদ্য ছাড়ায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারতো। আর সেই সঙ্গে মাটির নীচেও নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারতো।
ওই দুর্ঘটনার পরেই তারা ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল আয়ত্তের পর সাপ দের বিবর্তন ঘটতে থাকে। সেসময়ে সাপ দের আকার ছিল অনেকটাই ছোটো। পরে আকারের বিবর্তন ঘটতে ঘটতে বর্তমান আকারে পরিণত হয়েছে।
আধুনিক সময়ে এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত হওয়া সাপ দের ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গণ ও প্রায় ২৯০০টি প্রজাতি রয়েছে। এখন অ্যান্টার্কটিকা ও কয়েকটি আইসল্যান্ড ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সমগ্র অংশেই সাপ দের দেখা মেলে। আর এসবই ঘটেছে ওই দুর্ঘটনার পরে বেঁচে থাকা সাপ দের বিবর্তন ও ছড়িয়ে পড়া থেকেই।