এক সময় মোবাইল মানেই ছিল নোকিয়া। বিশ্ব জুড়ে ফিনল্যান্ডের এই কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মোবাইল বিক্রি হওয়া সংস্থা এটি। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নোকিয়াও চলতে পারেনি। বাজারে টাচস্ক্রিন মোবাইলের আবির্ভাবে জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এর। এরপর যখন এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হয়, নোকিয়ার জনপ্রিয়তা একেবারেই কমে যায়।

সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্বের সমস্ত কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। আর এটাই স্বাভাবিক। এই পরিবর্তন প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক উভয় দিক থেকেই ঘটতে পারে। আর এই পরিবর্তনের ধারায় যারা শরীর ডোবাতে পারে না, তাদেরকে হয় পিছিয়ে থাকতে হয় সময় এর অনেক পিছনে, নয়তো হারিয়ে যেতে হয় চিরদিনের জন্য। আধুনিক এই সময় এর বাজারজাত কোম্পানিগুলিও সময় পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তিত করে ফেলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে। যারা আধুনিক ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তাদের দ্রব্যাদি বাজারজাত করতে পারে তারাই ঠিকে থাকতে পারে ‘কম্পিটিশন’-এর দৌড়ে। বাকিরা জনপ্রিয়তা খুইয়ে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সুলেখা কালি ও কলম
গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকে ভারতে যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নিয়েছে, বিলেতি জিনিসের বয়কট চলছে। তখন জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছিল স্বদেশী জিনিসগুলি। এই সময়ে ননীগোপাল মৈত্র ও শঙ্করাচার্য মৈত্র নামে দুই ভাই স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে লেখার কালি তৈরির ব্যবসায় নেমে পড়েন। আর তাঁদের হাত ধরেই সম্পূর্ণ দেশীয় উপায়ে তৈরি হয়েছিল ইতিহাস সৃষ্টি করা সুলেখা কালির। পরে এই কোম্পানি ফাউন্টেন কলম তৈরি করতেও শুরু করে। ধীরে ধীরে এই কালি ও কলমের জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে তাদের সুনাম। সে সময় বিদেশেও অনেকগুলি কারখানা ছিল এই কোম্পানির।
কিন্তু সুলেখার জনপ্রিয়তা কেড়ে নেয় বলপেন। ৭০-এর দশক থেকে বলপেনের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। অপরদিকে যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে হারিয়ে যেতে থাকে সুলেখা। ১৯৮৮ সাল নাগাদ বিভিন্ন কারণে এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য। তবে ২০০৬ সালে আবার নতুন করে কোম্পানির কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কিন্তু জনপ্রিয়তা আর পূর্বের মতো ফিরে পায়নি।
কোডাক
এক সময়ে ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানির জনপ্রিয়তা ছিল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি মূলত ফিল্ম ও ক্যামেরা তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। জর্জ ইস্টম্যান ১৮৮৯ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গেই ব্যবসা করছিল তারা। কিন্তু বর্তমানের আধুনিক মোবাইলগুলিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা যুক্ত হওয়ায় কোডাক ক্যামেরার চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়।
এইচএমটি
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া এইচএমটি-র জনপ্রিয়তা ছিল মূলত ঘড়ির জন্য। এর পুরো নাম ‘হিন্দুস্থান মেশিন টুলস লিমিটেড’। আধুনিক মডেলের অসাধারণ সব ঘড়ি নির্মাণ করত এই কোম্পানিটি। তবে সময় এর সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করে এইচএমটি। বর্তমানে মোবাইলের রমরমা বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ঘড়িও লুপ্ত হতে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে এইচএমটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।
রাজদূত বাইক
মাত্র ৭ বছর টিকে ছিল রাজদূত বাইক। আর এই অল্প সময় এর মধ্যে যতটা জনপ্রিয় হতে পেরেছে, সমসাময়িক অন্য কোনও মডেলের বাইক ততটা হতে পারেনি। এটি ছিল জাপানের ইয়ামাহা কোম্পানির ভারতীয় মডেল। ১৯৮৩ সালে এই মডেলটি তৈরি করেছিল স্কটশ গ্রুপ। ১৯৮৯ সালে মডেলটি তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
নোকিয়া
এক সময় মোবাইল মানেই ছিল নোকিয়া। বিশ্ব জুড়ে ফিনল্যান্ডের এই কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মোবাইল বিক্রি হওয়া সংস্থা এটি। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নোকিয়াও চলতে পারেনি। বাজারে টাচস্ক্রিন মোবাইলের আবির্ভাবে জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এর। এরপর যখন এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হয়, নোকিয়ার জনপ্রিয়তা একেবারেই কমে যায়। কারণ নোকিয়া এই প্রযুক্তি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৩ সাল নাগাদ এই কোম্পানিটিও মাইক্রোসফ্ট-এর কাছে শর্তসাপেক্ষে বিক্রি হয়ে যায়।