Friday, April 18, 2025

শোলা শিল্প-কে আঁকড়ে ধরেই একান্তে পথ চলছেন হীরক চিত্রকর (ভিডিও সহ)

- Advertisement -

শোলা মূলত এক প্রকার জলজ উদ্ভিজ্জ অংশ। কাঁচা অবস্থায় শোলা গাছের কাণ্ড পাট গাছের মতো সবুজ হলেও পরিপূর্ণ হলে এটি বাদামি বা মেটে রঙ ধারণ করে। তবে কাণ্ডের ভিতরের অংশ সব সময়ই থাকে সাদা। আর এই সাদা অংশটিই মূলত শোলা শিল্প-এর প্রয়োজনীয় উপাদান। শোলা র বৈজ্ঞানিক নাম Aeschymene Aspera। বঙ্গদেশে দুই রকমের শোলা গাছ রয়েছে, ভাট শোলা ও কাঠ শোলা।


শোলা

সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে শোলা র কদর রয়েছে ব্যাপক। এমনকি হিন্দু পুরাণ শাস্ত্রগুলিতেও শোলা র উল্লেখ পাওয়া যায়। শোলা নির্মিত বিভিন্ন সামগ্রী আজও মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব বা অনুষ্ঠানে শোলা র একাধিক দ্রব্যের ব্যবহার দেখা যায়। প্রতিমার অলঙ্কার বা মন্দির সজ্জায়, বিবাহের মুকুট নির্মাণে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সাজ-সজ্জা নির্মাণে এর চলন রয়েছে। এক কথায় বিলুপ্ত হওয়া থেকে কোনও রকমে নিজেকে দূরে রাখতে পেরেছে যে প্রাচীন শিল্পগুলি, তার অন্যতম এই শোলা শিল্প।

আর এই শোলা শিল্পকেই এখন নিজের জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলেছেন শিল্পী হীরক চিত্রকর। হীরক বাবুর বাড়ি বীরভূম জেলার আমোদপুরের সুকান্তপল্লীতে। ঢালায় রাস্তার ধারের একটি ছোট্ট একতলা বাড়িতে চলে তাঁর শৈল্পিক কার্যকলাপ। তিনি জানিয়েছেন, বাল্যকাল থেকেই তাঁর এই শোলা র প্রতি বিশেষ আকর্ষণ। বোলপুর নিবাসী মামা তন্ময় চিত্রকরের কাছেই ঘটেছিল তাঁর এই শোলা শিল্পে হাতেখড়ি।

এক সময়ে তাঁর এই ছোট্ট বাড়িটি ছিল রীতিমতো শোলা শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। সেসময় একাধিক শোলা শিল্পী তাঁর কাছে কাজ শিখতে এসেছে। কাজ শেখার পর কেউ চলে গিয়েছে, কেউবা হীরক বাবুর সহকারী হিসাবে থেকে গিয়েছে দীর্ঘদিন।



এখানে উল্লেখ করতে হয়, শোলা মূলত এক প্রকার জলজ উদ্ভিজ্জ অংশ। কাঁচা অবস্থায় শোলা গাছের কাণ্ড পাট গাছের মতো সবুজ হলেও পরিপূর্ণ হলে এটি বাদামি বা মেটে রঙ ধারণ করে। তবে কাণ্ডের ভিতরের অংশ সব সময়ই থাকে সাদা। আর এই সাদা অংশটিই মূলত শোলা শিল্প-এর প্রয়োজনীয় উপাদান।

- Advertisement -

শোলা র বৈজ্ঞানিক নাম Aeschymene Aspera। বঙ্গদেশে দুই রকমের শোলা গাছ রয়েছে, ভাট শোলা ও কাঠ শোলা। ভাট শোলা তুলনামূলক অনেক বেশি নরম হওয়ায় শোলা শিল্পে এই শোলা -ই বেশি ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে শোলা চাষ করা হয় অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলিতে। যেখানে জল জমে থাকতে পারে অনেক বেশি দিন ধরে। পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনায় শোলা র চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।

হীরক বাবু জানালেন, সেসময় শোলা সামগ্রীর বাজার ছিল ভালো। কলকাতার একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর নিত্য যোগাযোগ ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানগুলির ‘অর্ডার’ অনুযায়ী তিনি শোলা র সামগ্রী তৈরি করতেন। সেসময় সহকারীদের মাহিনা দিয়েও তাঁর ১৫-২০ হাজার টাকা উপার্জন ছিল। তবে সেসব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে করোনা সংক্রমণ। লকডাউনের পর আর তেমনভাবে বড়ো কোনও অর্ডারও পান না তিনি। সহকারীদের মাহিনা দিতে না পারায় তাঁদেরকেও ছাটাই করতে হয়েছে। এখন ছোটো ছোটো দু-একটি যা অর্ডার পান, নিজেই কোনও রকমে তা পূরণ করার চেষ্টা করেন।

যদিও হীরক বাবুর আশা, এই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে দ্রুত। আর সেই সঙ্গে শোলা শিল্পেরও কদর বাড়বে। তিনি আবার আগের মতো শোলা সামগ্রীর অর্ডার পাবেন। নিজের পাশাপাশি অন্য শোলা শিল্পীদেরও উপার্জনে সহযোগিতা করতে পারবেন।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর