শীতের মরশুমে সমস্ত গাছ জুড়ে হলুদ রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে। ফলসা কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকলে গাঢ় বেগুনী বা কালো রঙে হয়ে থাকে। স্বাদ হালকা টকযুক্ত মিষ্টি। ফল পাকে গ্রীষ্মের মরশুমে। সমস্ত গাছ জুড়ে যখন ফল পাকে তখন রবীন্দ্রনাথের লেখা “ফলসা বনের গাছে গাছে ফল ধরে মেঘ ঘনিয়ে আছে” – এই লাইনটির কথা অবশ্যই মনে পড়ে। যদিও ফলসা আজ লুপ্তপ্রায় ফল।

আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু বা কলার মতো ফলগুলি প্রায় সহজলভ্য বাংলার মাটিতে। বিভিন্ন ঋতুতে ফলা এই ফলগুলির বাহার যথেষ্ট আকর্ষিত করে বাঙালিকে। কিন্তু কিছু ফল অতিতের মতো এখন আর নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না। কারণ যায়-ই থাকুক, সে সমস্ত ফলের কদর আজ সত্যিই কমেছে বর্তমান বাঙালির কাছে। পরিণত হয়েছে লুপ্তপ্রায় ফল এ। অথচ এরাই এক সময়ে বাঙালির মুখে রসনা ফিরিয়ে আনত। এমনই কয়েকটি লুপ্রপ্রায় ফল নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
গাব
‘গাব’ নামটির সঙ্গে পরিচিত থাকলেও এই ফলের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে খুব কম বাঙালির। অথচ গাব বাংলার নিজস্ব গাছগুলির মধ্যে একটি। গাছটি দেখতে অনেকটা জাম গাছের মতো। এটি ঘন চিরহরিৎ বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। খুব ধীরে ধীরে বাড়ে এই গাছ। শীতের মরশুমে গাছে ফুল ফোটে। সেই ফুল থেকে সবুজ ফল জন্মায় বসন্তের শুষ্ক মরশুমে। পরে গ্রীষ্মের দাবদাহে সেই ফল হলুদ বর্ণ নিয়ে পাকতে শুরু করে। এক সময়ে গ্রাম-বাংলার কিশোর-কিশোরীদের কাছে অতি জনপ্রিয় ছিল এই গাব ফল। পাকা ফলের মধ্যে থাকে রসাল বীজ। যা অনেকটা কৃত্রিম চকলেটের মতো। স্বাদ মিষ্টি ও কিছুটা কষযুক্ত। বর্তমানে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গাব এখন লুপ্তপ্রায় ফল এ পরিণত হয়েছে।
বেত ফল
বাংলার ঝোপে ঝাড়ে এক সময়ে প্রচুর বেত গাছ ছিল। বেতের ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্য কারোরই তেমন অজানা নেই। বেতের তৈরি বিভিন্ন আসবাব বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে আসছে মানুষ। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। সেই সঙ্গে বেরিয়েছে বেতের একাধিক বিকল্প আসবাবও। যা অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। আর তাই লুপ্ত হওয়ার পথে এখন বেত এবং সেই সঙ্গে বেত ফল। বেত ফলও অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এক সময়ে গ্রাম-বাংলার কিশোর-কিশোরীদের কাছে। মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে এই গাছে। তারপর খেজুরের মতো থোকায় থোকায় ফল জন্মে সমস্ত গাছ জুড়ে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে ঘিয়ে রঙের হয়ে থাকে ফলগুলি। বাইরের অংশ শক্ত হলেও ভিতরটা হয়ে থাকে নরম ও রসালো। এর স্বাদ টকযুক্ত মিষ্টি।
ফলসা
দক্ষিণ এশিয়ার নিজস্ব গাছ ফলসা। বাংলার মাটিতেও এই গাছ বহু বছর ধরে জন্ম নিয়ে আসছে। তাই ফলসাকে বাংলার নিজস্ব গাছ বললেও এখন আর ভুল বলা হবে না। বৃক্ষ ও গুল্ম জাতীয়র মাঝের পর্যায়ের এক ধরণের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এটি। শীতের মরশুমে সমস্ত গাছ জুড়ে হলুদ রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে। ফলসা কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকলে গাঢ় বেগুনী বা কালো রঙে হয়ে থাকে। স্বাদ হালকা টকযুক্ত মিষ্টি। ফল পাকে গ্রীষ্মের মরশুমে। সমস্ত গাছ জুড়ে যখন ফল পাকে তখন রবীন্দ্রনাথের লেখা “ফলসা বনের গাছে গাছে ফল ধরে মেঘ ঘনিয়ে আছে” – এই লাইনটির কথা অবশ্যই মনে পড়ে। যদিও ফলসা আজ লুপ্তপ্রায় ফল।
গোলাপ জাম
গোলাপ জামের নাম শুনলেও এই ফলের সঙ্গে পরিচিতি রয়েছে খুব কম মানুষের। অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদ যুক্ত এই গোলাপ জামও আজ প্রায় লুপ্তপ্রায় ফল। এই ফলও গ্রীষ্মের মরশুমে পাকে। গোলাপ জাম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পাতা অনেকটা জাম পাতার মতো।
কাঠ বাদাম
বাদাম বা চিনা বাদাম গাছের নিচে শিকড়ের সঙ্গে গুচ্ছাকারে জন্মালেও কাঠ বাদামের জন্ম হয় গাছের ওপরে শাখায় শাখায়। কাষ্ঠযুক্ত শক্ত খোলকের মধ্যে লম্বাটে ধরণের বাদাম অবস্থান করে। তাই হয়তো এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাঠ বাদাম’। বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ এটি। তবে এই গাছ ভারত বা বাংলার নিজস্ব গাছ কিনা, সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য নেই। গাছের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ায় এই ফলও আজ লুপ্তপ্রায় ফল এ পরিণত হয়েছে।