ম্যালেরিয়া নতুন কোনও অসুখ নয়। বহু যুগ আগে থেকেই মানুষের নিত্য সঙ্গী হয়ে চলেছে। এর কোনও টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে কার্যকর ওষুধ অবশ্য রয়েছে। সাধারণত স্ত্রী অ্যানাফিলিস মশার অন্ত্রে বাস করা প্লাজমোডিয়াম গোত্রের জীবাণু এই ম্যালেরিয়া রোগের কারণ বলে চিহ্নিত।

শীতের কয়েকটা দিন বাদ দিলে, প্রায় সারা বছরই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় মশার কামড়ের। তাই গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে মশারী আর মশা মারার সরঞ্জাম নিত্য সঙ্গী এখন। তবুও কিছু অঞ্চলে মশার উৎপাত এতটাই প্রাধান্য পায় যে ওই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু কিছুতেই পিছু ছাড়তে চাই না। সমীক্ষা বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছরই শুধুমাত্র ম্যালেরিয়ার কারণে প্রায় ৪-৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
তবে এর কিছুটা সমাধান হয়তো এবার করতে চলেছেন একদল গবেষক। বিবিসি সংবাদ মাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়ার লেক ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে মশা নিয়ে গবেষণা করছিলেন কেনিয়া ও ইংল্যান্ডের ওই গবেষক দলটি। গবেষণা চালানোর সময়েই তাঁদের নজরে আসে ‘মাইক্রোস্পরিডিয়া’ নামে এক ধরণের জীবাণু। এই জীবাণুগুলি সাধারণত ছোটো ছোটো কীট-পতঙ্গের অন্ত্রে বা জননকেন্দ্রে বসবাস করে। এটি মশার অন্ত্রেও লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে আশ্চর্য হয়ে গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, যে সমস্ত মশার শরীরে এই জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে, সেগুলি ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহক নয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, মাইক্রোস্পরিডিয়া নামের এই অণুজীবটি মশাকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করতে বাধা দেয়। তাঁরা আরও ধারণা করছেন, অন্তত ৫ শতাংশ কীট-পতঙ্গের শরীরে এই জীবাণুর উপস্থিতি থাকতে পারে। তবে মশার ক্ষেত্রে এটি দারুণ উপকারী হবে।
যদিও এ নিয়ে এখনও চলবে বিস্তারিত গবেষণা। গবেষকরা ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনাও তৈরি করে ফেলেছেন। তাঁরা চাইছেন, বংশ পরম্পরায় এই জীবাণু মশার শরীরে বহনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুক। তার জন্যে পূর্ণ বয়স্ক মশার শরীরে মাইক্রোস্পরিডিয়া প্রবেশ করাতে চাইছেন গবেষকরা। এর ফলে স্ত্রী অ্যানাফিলিস মশা প্রজননের ফলে বংশ পরম্পরায় জীবাণুটি তাদের শরীরে ধারণ করতে পারবে।
ম্যালেরিয়া নতুন কোনও অসুখ নয়। বহু যুগ আগে থেকেই মানুষের নিত্য সঙ্গী হয়ে চলেছে। এর কোনও টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে কার্যকর ওষুধ অবশ্য রয়েছে। সাধারণত স্ত্রী অ্যানাফিলিস মশার অন্ত্রে বাস করা প্লাজমোডিয়াম গোত্রের জীবাণু এই ম্যালেরিয়া রোগের কারণ বলে চিহ্নিত।
এদিকে সমস্ত পতঙ্গের মধ্যে মশার কোনও উপকারিতা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তবে অপকারিতা নিয়ে কারোরই কোনও সন্দেহ নেই। তাই পৃথিবী থেকে পুরোপুরি মশাকে বিলুপ্ত করলে তার কোনও প্রভাব বাস্তুতন্ত্রে নাও পড়তে পারে, এমনটাই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আবার কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা এর উলটো।
যাইহোক, পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে মশাকে বিতারিত করা একেবারেই সম্ভব নয়, যদি না মশা নিজে থেকে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। তবে মাইক্রোস্পরিডিয়া যদি সত্যিই মশাকে ম্যালেরিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, তাহলে সেটাই বা কম কিসের!