আসলে মেঘের দেখা মিললেই যে বৃষ্টি হবে, এমন কোনও কথা নেই। বিশেষ কিছু মেঘ থেকেই সাধারণত বৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার বৃষ্টি হওয়া মেঘেরও কতকগুলি ভাগ রয়েছে। বাকিরা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়ায় আকাশের গায়ে। মেঘের এই রকম শ্রেণী বিন্যাস প্রায় ২০০ বছর আগেই করে গিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ রসায়নবিদ, লিউক হাওয়ার্ড। তিনি দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার পর ১৮০২ সালে আস্কেসিয়ান সোসাইটিকে মেঘের শ্রেণী বিন্যাস করতে প্রস্তাব দেন।

খাতায় কলমে বর্ষাকাল বিদায় নিলেও বঙ্গদেশ থেকে বর্ষার বিদায় নিতে এখনও ২ মাসেরও বেশি সময় বাকি। কারণ গোটা শরৎকাল (ভাদ্র ও আশ্বিন) জুড়েই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলতে থাকে। আসলে শরতের নীল আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনায় যেখানে গাঢ় মেঘের সমাবেশ একটু বেশি মাত্রায় ঘটে, সেখানেই মেঘ গলে ঝরে পরে বৃষ্টি। তারপর হেমন্ত এগিয়ে এলে ধীরে ধীরে বিদায় নিতে থাকে বর্ষা।
গোটা বর্ষাকাল পেরিয়ে এখন সবে শরৎ। তাই সাদা বা ধূসর মেঘের আনাগোনা অতি স্বাভাবিক। এখন দিনের অধিকাংশ সময়ই আকাশ থাকছে মেঘলা। মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখাও মিলছে মেঘের আড়াল থেকে। তবে বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মধ্যে দু-এক পশলা হালকা অথবা মাঝারি।
আসলে মেঘের দেখা মিললেই যে বৃষ্টি হবে, এমন কোনও কথা নেই। বিশেষ কিছু মেঘ থেকেই সাধারণত বৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার বৃষ্টি হওয়া মেঘেরও কতকগুলি ভাগ রয়েছে। বাকিরা বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়ায় আকাশের গায়ে। মেঘের এই রকম শ্রেণী বিন্যাস প্রায় ২০০ বছর আগেই করে গিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ রসায়নবিদ, লিউক হাওয়ার্ড। তিনি দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার পর ১৮০২ সালে আস্কেসিয়ান সোসাইটিকে মেঘের শ্রেণী বিন্যাস করতে প্রস্তাব দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মেঘ আসলে ৪ প্রকার, সিরাস (Cirrus), স্ট্রাটাস (Stratus), কিউমুলাস (Cumulus) ও নিম্বাস (Nimbus)। এই নামগুলি তিনি নিয়েছিলেন ল্যাটিন শব্দ থেকে। যার বাংলা করলে হয়, সিরাস অর্থাৎ অলক মেঘ, স্ট্রাটাস অর্থাৎ স্তর মেঘ, কিউমুলাস অর্থাৎ স্তুপ মেঘ ও নিম্বাস অর্থাৎ ঝঞ্ঝা মেঘ।
পরে ১৮৯৪ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সমিতি মেঘকে ১০টি শ্রেণীতে ভাগ করে। এই ভাগ তারা করেছিল মেঘের উচ্চতা ও আকার অনুসরণ করে। তবে বর্তমান যুগের মেঘ বিশেষজ্ঞরা মেঘের পাদদেশের উচ্চতার উপর নির্ভর করে মেঘকে উঁচু মেঘ, মাঝারি মেঘ ও বৃষ্টিযুক্ত মেঘ এই ৩টি স্তরে সাজিয়ে মোট ২৮টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। উঁচু ও মাঝারি মেঘ বোঝাতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন যথাক্রমে সিরো (Cirro) ও অল্টো (Alto)। বৃষ্টিযুক্ত মেঘ বোঝাতে তাঁরা নিম্বো (Nimbo) নামে আলাদা আর এক শ্রেণীর মেঘের কথা উল্লেখ করেছেন।
উঁচু মেঘের সাধারণ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ মিটারের উপর। এই স্তরের মধ্যে পড়ছে সিরো-স্ট্রাটাস, সিরাস, সিরো-কিউমুলাস প্রভৃতি মেঘগুলি। এদের আকার অনেকটা পেঁজা তুলো, ঝলমলে পালক, গোলাকার ঢেউ বা ধবধবে সাদা। এই মেঘ থেকে সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না এবং এরা ঝলমলে ও পরিষ্কার আবহাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
মাঝারি উচ্চতার মেঘগুলি সাধারণত ২০০০-৫০০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করে। এই স্তরের মধ্যে রাখা হয়েছে অল্টো-স্ট্রাটাস, অল্টো-কিউমুলাস, নিম্বো-স্ট্রাটাস প্রভৃতি শ্রেণীর মেঘগুলিকে। একটি বৃহৎ অঞ্চলের সমস্ত আকাশকে এই শ্রেণীর মেঘেরা ঢেকে ফেলতে পারে। সূর্যের আলো যেন ঘষা কাঁচ পেরিয়ে আসছে বলে মনে হয়। সাধারণত বর্ষার মরশুমে এই শ্রেণীর মেঘেই সমস্ত আকাশ ঢেকে থাকে। স্বল্প বা দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিও হতে পারে এই মেঘ থেকে।
নিচু মেঘগুলির উচ্চতা হয়ে থাকে প্রায় ২০০০ মিটারের নিচে। এই স্তরের মধ্যে পড়ছে স্ট্রাটাস, কিউমুলাস, স্ট্রাটো-কিউমুলাস, নিম্বো-কিউমুলাস, নিম্বো-স্ট্রাটাস প্রভৃতি মেঘগুলি। এই শ্রেণীর মেঘগুলির আকার অনেকটাই ভয়ঙ্কর। মেঘের ঘনত্ব অত্যধিক বেশি হওয়ায় কালো বা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি বা স্বল্প সময়ে ভারী বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয় এই মেঘেরা।
এছাড়াও ম্যামাটাস কিউমুলোনিম্বাস, কিউমুলোনিম্বাস ক্যালভাস, পাইরোকিউমুলাস, কিউমুলোনিম্বাস ইনকাস প্রভৃতি শ্রেণীর মেঘের কথাও উল্লেখ করেছেন আধুনিক মেঘ বিশেষজ্ঞরা। এই মেঘগুলি সাধারণত বজ্রবিদ্যুৎসহ তীব্র ঝড়-বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।
তবে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রখর না হলে মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘেদের সনাক্ত করা মুশকিল। কারণ যে কোনও মেঘের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি বা আকার মুহূর্তের মধ্যে পালটে যেতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী এক শ্রেণীর মেঘ অপর শ্রেণীতে মিশেও যেতে পারে। তাছাড়া একই সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণীর মেঘেরও আগমন ঘটতে পারে আকাশে।