Thursday, April 10, 2025

মারি বোনাপার্ত রাজকুমারী হয়েও নারীর যৌনতা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন

- Advertisement -

১৯৫২ সালে মারি বোনাপার্ত তাঁর ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন, তাঁর বয়স ৮ বা ৯ বছরের সময় একবার বাড়ির এক দাসীর কাছে হস্তমৈথুন করার সময়ে ধরা পরে যান তিনি। দাসী এটা করা ‘পাপ কাজ’ হিসাবে তাঁকে বুঝিয়েছিলেন। এমনকি মৃত্যু ভয়ও দেখিয়েছিলেন। পরে তিনি এটা বন্ধ করে দেন। তাঁর ২০ বছর বয়সে তিনি আর একবার বিতর্কে জড়ান। সেবার তাঁর বাবার এক বিবাহিত সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম ঘটিত কারণে পরিবারেরও সম্মানহানি হয়।


মারি বোনাপার্ত

রাজ পরিবারের সদস্য ছিলেন তিনি। ছিলেন রাজকুমারী বা প্রিন্সেস-ও। যে পরিবারে তাঁর থাকার কথা ছিল একেবারেই অন্দরমহলের বাসিন্দা হয়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে অবলীলায় চালিয়ে গিয়েছেন গবেষণা। শুধু দুই-এক বছরের জন্য নয়। আজীবনের জন্য। গবেষণার জন্য তিনি এমন একটি বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন। যে বিষয়টি নিয়ে সে সময়ে খুব কম পুরুষও গবেষণা করার সাহস পেয়েছে। সে সময়ে হয়তো তিনিই একমাত্র নারী ছিলেন, যিনি নারীর যৌনতা নিয়ে গবেষণা করার সাহস দেখিয়েছিলেন।

কথা হচ্ছে মারি বোনাপার্ত (১৮৮২-১৯৬২) সম্পর্কে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি তাঁরই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে আনালিয়া লরেন্তে-এর কলমে। ওই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মারি বোনাপার্ত ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম নেপোলিয়নের একজন বংশধর। সেই সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী রাজকুমার ফিলিপের কাকি হিসাবে।

মারি বোনাপার্ত -এর পিতা ছিলেন ফ্রান্সের প্রিন্স রোলান্ড নেপোলিয়ন বোনাপার্ত এবং মা ছিলেন রানী মারি ফেলিক্স। প্রথম জীবন খুব যে সুখের ছিল, তা বলা যাবে না তাঁর। কারণ জন্মের প্রায় ১ মাসের মধ্যেই তাঁর মা মারা যান। তিনি হয়ে পড়েন সম্পূর্ণ একা। সেসময়ে তাঁর বাড়িতে অন্য কোনও শিশু না থাকাতে খেলার সঙ্গীর অভাবে তিনি আরও একা হয়ে পড়েন।

ছোটো থেকেই তাঁর জানার আগ্রহ ছিল প্রবল। সবচেয়ে কৌতূহল ছিল শরীর সম্পর্কে। ১৯৫২ সালে মারি বোনাপার্ত তাঁর ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন, তাঁর বয়স ৮ বা ৯ বছরের সময় একবার বাড়ির এক দাসীর কাছে হস্তমৈথুন করার সময়ে ধরা পরে যান তিনি। দাসী এটা করা ‘পাপ কাজ’ হিসাবে তাঁকে বুঝিয়েছিলেন। এমনকি মৃত্যু ভয়ও দেখিয়েছিলেন। পরে তিনি এটা বন্ধ করে দেন। তাঁর ২০ বছর বয়সে তিনি আর একবার বিতর্কে জড়ান। সেবার তাঁর বাবার এক বিবাহিত সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম ঘটিত কারণে পরিবারেরও সম্মানহানি হয়।

- Advertisement -

যাইহোক, এসব বিতর্কিত বিষয় বাদ দিলে তিনি আপাদমস্তক ছিলেন একজন বিদ্রোহিণী। তাঁর ডায়েরিতেই তিনি উল্লেখ করেছেন, মেয়ে বলেই সব কিছুকে মাথা নিচু করে মেনে নেওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। এই মনোভাব তাঁর ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করা গিয়েছে।

ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, মারি বোনাপার্ত -এর গবেষণার বিষয় ছিল নারীর কামনা ও যৌনতা। এবিষয়ে ১৯২৪ সালে তিনি এ.ই নারজানি ছদ্মনামে একটি প্রবন্ধও লেখেন। সেখানে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে উল্লেখ করেছেন, যৌন আনন্দ শুধু পুরুষদেরই জন্য, নারী এখানে উপেক্ষিত।

১৯২০ সালের পর তিনি নারীদের যৌনাঙ্গ নিয়েও গবেষণা করেন। যদিও তিনি এসবের জন্য নারীদের চিকিৎসকের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতেন। সেসময়ে তিনি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে উপনীত হয়েছিলেন, প্রতিটি নারী শরীরের গঠন প্রকৃতি আলাদা আলাদা হয়। এমনকি নারীদের যোনীর গঠনও আলাদা হয়। আর তাই নারীদের যৌন সুখের বিষয়টিও এর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। প্রকৃতপক্ষে এই তথ্য পরে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

যদিও অনেক পরে তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন। পূর্ব গবেষণার সমস্ত কিছুই তিনি বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। অধ্যাপক ওয়ালেন জানিয়েছেন, ১৯৫০ সাল নাগাদ ‘নারীর যৌনতা’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল মারি বোনাপার্ত -এর। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, নারীর যৌন সুখের জন্য তার শারীরিক গঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। এখানে গভীর সম্পর্ক রয়েছে মনের সঙ্গে।

অধ্যাপক ওয়ালেন আরও জানিয়েছেন, রাজপরিবারের অন্দরমহলের একজন নারী হয়েও তিনি যেভাবে এই বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন, সেসময়ে তা ছিল অত্যন্ত সাহসের ব্যাপার। তিনি ছিলেন একজন নারী বিপ্লবী। ইতিহাসে তিনি স্বীকৃতি পাবেন। আর এক অধ্যাপক আমরু দাবি করেছেন, মুক্তমনা সাহসী পদক্ষেপের জন্যই মারি বোনাপার্ত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর