Wednesday, March 12, 2025

ভ্যালেন্টাইনস ডে –র আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক নির্মম ভালবাসার গল্প

- Advertisement -

যদিও ভ্যালেন্টাইনস ডে এসেছে আরও পরে। তবে এটিও রোমানদের হাত ধরে। প্রাচীন রোমে বসন্তের শুরুতে লুপারক্যালিয়া নামে এক ধরণের উৎসব হত। যার মূলে ছিল জমির উর্বরতা বৃদ্ধির এক বিশেষ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম রীতি ছিল ভালবাসার মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে মিলিত হওয়া।

ভ্যালেন্টাইনস ডে
Image by Gerd Altmann from Pixabay

যুগ যুগ ধরে মানুষের বিশ্বাস, প্রেম বা ভালবাসার কাছে প্রায় সমস্ত কিছুই তুচ্ছ। ভালবাসা দিয়ে প্রায় সব কিছুকেই জয় করা সম্ভব। তাই মানুষের জীবনে প্রতিটি দিনই আসুক ভালবাসার দিন হিসেবে।

কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে ভালবাসার কথা আর কতজন মেনে চলে। ঘৃণা, হানাহানি আর রক্তক্ষয়ে ভরে গেছে সমগ্র বিশ্ব। তবুও একটি দিনের জন্য ভালবাসার কথা জানিয়ে যায় ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’।

ভ্যালেন্টাইনস ডে অর্থাৎ বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে ‘ভালবাসা দিবস’, যে দিনটিতে ভালবাসার মানুষগুলি একে অপরকে ভালবাসার কথা জানান দেয়। আর সেই সঙ্গে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে তাকে গোলাপ বা চকলেট উপহার দেয়। স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দিষ্ট দিনটিতে কেউ কাউকে ঘৃণার চোখে দেখতে চায় না।

অথচ রোমান লৌকিক কাহিনি অনুযায়ী ১৪ ফেব্রুয়ারির এই দিনটিতে ঘটেছিল এক অদ্ভুত নির্মম ঘটনা। যাকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে শুরু হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে। কী সেই ঘটনা?

- Advertisement -

তার আগে জেনে নেওয়া ভাল, ঘটনাটি ঘিরে রয়েছে বেশ বিতর্ক। কারণ ঘটনাটির প্রত্যক্ষ কোনও জোরালো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ঐতিহাসিকভাবে যেটুকু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাও সত্য হিসেবে প্রমাণ পেতে যথেষ্ট নয়। প্রায় আঠারোশো বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে বেশ বিকৃত বা অতিরঞ্জিতও হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই ঘটনাটিকে লৌকিক কাহিনি হিসেবেই ধরে নেওয়া সমীচীন। তবে লৌকিক কাহিনি মানেই কল্পকাহিনি নয়। কিছু বাস্তব অবশ্যই রয়েছে। না হলে দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে উদযাপন করা হত না।

ঘটনাটি খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর। সে সময় রোমান সম্রাট ছিলেন মার্কাস অরেলিয়াস ক্লডিয়াস (২১৪ – ২৭০ খ্রিস্টাব্দ)। সিংহাসনে আহরণ করেই তার এক অদ্ভুত খেয়াল চাপলো মাথায়। তার ধারণা হল, যোদ্ধারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের শক্তি, সামর্থ্য ও সাহস কমে যেতে পারে। কারণ পারিবারিক বন্ধন মুক্ত সৈনিক যেভাবে অদম্য সাহস ও ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করতে তৎপর হবে, একজন বিবাহিত সৈনিক কখনওই তা পারবে না। ফলে সৈনিকদের মধ্যে তিনি বিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন।

তাতে রোমান সৈনিকদের মধ্যে বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। কিন্তু কেউই বাইরে প্রকাশ করার সাহস দেখাতে পারল না। কিন্তু ব্যাপারটিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখলেন না সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজন জনপ্রিয় খ্রিস্টান পাদ্রী। অনেকের মতে তিনি একজন চিকিৎসকও ছিলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বরাবরই ছিলেন প্রেম ও ভালবাসায় বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন মানুষের দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করতে অবশ্যই একজন ভালবাসার মানুষের প্রয়োজন। যে তার দীর্ঘ জীবনের জীবনসঙ্গী হবে।

তাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গোপনে রোমান অবিবাহিত সৈনিকদের বিবাহ দিতে লাগলেন। তিনি ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মযাজক, তাই তার শত্রুর অভাব ছিল না। কারণ রোমে সে সময়ে খ্রিস্টধর্মকে তখনও দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছিল। তার উপর রোমান সম্রাটের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি সৈনিকদের বিয়ে দিচ্ছেন, তা জানাজানি হওয়ায় সম্রাট ক্লডিয়াসের বিষ নজরে আসেন তিনি। গ্রেফতার করা হয় তাকে।

কিন্তু জেল বন্দী থেকেও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে দমিয়ে রাখা যায়নি। সেখান থেকেই তিনি ভালবাসার কথা প্রচার করতে শুরু করেন। সে সময়ে একবার কারারক্ষী প্রধানের মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বহু চিকিৎসকের চিকিৎসাতেও মেয়েটিকে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন-এর শরণাপন্ন হয় কারারক্ষী প্রধান।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তার অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতিতে মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলেন। শুধু তাই নয়, অবশেষে মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। কিন্তু কিছুতেই তাকে ভালবাসার কথা জানিয়ে উঠতে পারেন না তিনি। এদিকে তার মৃত্যুদণ্ডের দিন স্থির হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি (যদিও এই দিনটি নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক)। অবশেষে এই দিনেই একটি দীর্ঘ চিঠি লিখে তার মনের কথা মেয়েটিকে জানিয়ে যায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন।

যদিও ভ্যালেন্টাইনস ডে এসেছে আরও পরে। তবে এটিও রোমানদের হাত ধরে। প্রাচীন রোমে বসন্তের শুরুতে লুপারক্যালিয়া নামে এক ধরণের উৎসব হত। যার মূলে ছিল জমির উর্বরতা বৃদ্ধির এক বিশেষ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম রীতি ছিল ভালবাসার মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে মিলিত হওয়া। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই উপায়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া যাবে এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ঘটে তুলনামূলক অধিক ফসল ফলবে।

পরবর্তীকালে এই উৎসবটিকে খ্রিস্টধর্মের একটি উৎসবে পরিণত করা হয়। এবং সেই সঙ্গে তার প্রতিনিধি করা হয় শহিদ ও ভালবাসার মানুষ হিসেবে পরিচিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইন –কে। আরও পরে তাঁকে সম্মান জানাতে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসার দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর