প্রজাপতি কে পরিবেশে টিকে থাকতে এবং অন্য পতঙ্গের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে তাদের রঙ-বেরঙের হতে হয়। এই জন্যেই তারা সবুজ গাছপালা, শুকনো কাঠ, রঙিন ফুলের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। আর তাই অন্য শিকারি পতঙ্গের চোখকে সহজেই ধোঁকা দিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে যাওয়া এদের কাছে অনেক সহজ হয়ে ওঠে। প্রজাপতির রঙ মূলত তিনটি ভিন্ন কারণ থেকে আসে, পিগমেন্টেড, স্ট্রাকচারাল এবং কালার এক্সটোর্ট।

ভাবতে অবাক লাগে, এক সময়ের কুৎসিত শুঁয়োপোকা রূপ বদলিয়ে পরিণত হয় রঙিন প্রজাপতিতে। যে শুঁয়োপোকাকে কেউই পছন্দ করতে চায় না, তারই পরবর্তী জীবনের ছবিকে লেন্স বন্দি করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছোটাছুটি করেন বিশ্বের খ্যাতিমান ফটোগ্রাফাররাও। কারণ প্রজাপতি র লাল, নীল, হলুদ, কমলা রঙের ঝাঁ চকচকে ডানায় চোখ আটকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক তাঁদের।
কিন্তু এই রঙের রহস্য আসলে কী? কোথায় পেলো তারা এতো রঙ? যদিও পেল, তবু সব প্রজাপতি কেনই বা একই রঙের হল না? এরকম অনেক প্রশ্নই কারও কারও মাথায় স্বাভাবিকভাবেই কিলবিলিয়ে বেড়াবে হয়তো। এবার জেনে নেওয়া যাক এই প্রশ্নগুলির উত্তর বিজ্ঞান কি দিচ্ছে।
প্রজাপতিকে পরিবেশে টিকে থাকতে এবং অন্য পতঙ্গের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে তাদের রঙ-বেরঙের হতে হয়। এই জন্যেই তারা সবুজ গাছপালা, শুকনো কাঠ, রঙিন ফুলের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। আর তাই অন্য শিকারি পতঙ্গের চোখকে সহজেই ধোঁকা দিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে যাওয়া এদের কাছে অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
প্রজাপতি র রঙ মূলত তিনটি ভিন্ন কারণ থেকে আসে, পিগমেন্টেড, স্ট্রাকচারাল এবং কালার এক্সটোর্ট।
১. পিগমেন্টেড : পিগমেন্টেড হল সাধারণ রঙ গঠন পদ্ধতি। মানুষের চামড়ার রঙ গঠনের জন্য দায়ী মেলানিন নামের এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ। এই মেলানিনের কমবেশি আধিক্যের জন্য মানুষেরা কেউ কালো (নিরক্ষীয় অঞ্চলের মানুষ), কেউ ফর্সা (শীতল অঞ্চলের মানুষ), কেউ বাদামী (ভারতীয় উপমহাদেশ বা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষ) বা কেউ হলদেটে (উত্তর-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের মানুষ) হয়ে থাকে। মেলানিন শরীরে অধিক মাত্রায় সঞ্চিত হলে চামড়ার রঙ কালো হয়ে যায়। খুব সামান্য মাত্রায় সঞ্চিত হলে চামড়া ফর্সা বা হলদেটে হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝারি পরিমাণ সঞ্চিত হলে বাদামী বর্ণ ধারণ করে। প্রজাপতির শরীর বা ডানাতেও এই মেলানিনের কমবেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মেলানিন তাদের শরীর বা ডানার সব জায়গায় সমানভাবে সঞ্চিত হয় না। কোথাও কম, কোথাও বেশি, আবার কোথাও মাঝারি। তাদের ডানার যেসব জায়গায় মেলানিন বেশি সঞ্চিত হয়, সাধারণত সেই স্থানগুলি কালো দেখায়। যেখানে কম মাত্রায় মেলানিন থাকে, সেই স্থানগুলি হলুদ রঙের হয়। যেখানে মেলানিন নেই, সেই স্থানগুলি সাদা আর মাঝারি মাত্রার মেলানিন থাকলে সেই স্থানগুলি বাদামী রঙের হয়। পৃথিবীতে বাদামী রঙের প্রজাপতির সংখ্যা-ই সবচেয়ে বেশি।
২. স্ট্রাকচারাল : শুধু মেলানিনের কমবেশি সঞ্চয়ের ফলেই যে প্রজাপতি র রঙ গঠিত হয়, তা নয়। তাহলে তাদের ডানার লাল, নীল, খয়েরি বা কমলা রঙ পাওয়া যেত না। স্ট্রাকচারাল পদ্ধতিতেও তাদের রঙ গঠিত হয়। সাদা আলোক রশ্মি বা সূর্য রশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে বিভিন্ন রঙের আলোক রশ্মির গতিবেগ ভিন্ন হওয়ার জন্য এবং একই সাথে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের জন্য আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। যার ফলে তৈরি হয় বর্ণালী। একে অনেক সময় ইন্দ্রধনুচ্ছটাও বলা হয়ে থাকে (যেমন বর্ষাকালের রামধনু)। ঠিক একইভাবে এই পদ্ধতি প্রজাপতি র ডানার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রতিটি প্রজাপতি র ডানা হাজার হাজার আণুবীক্ষণিক আঁশ দ্বারা আবৃত। খালি চোখে যে আঁশগুলিকে ফুলের পরাগ বা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অভ্রের কণা বলে ভ্রম হয়। আঁশগুলি আবার দুই থেকে তিনটি স্তরে সাজানো থাকে। স্তরগুলির মাঝখানটা বায়ুপূর্ণ হয়। সূর্য রশ্মি যখন প্রজাপতি র ডানায় আপতিত হয়, তখন ওই স্তরগুলির দ্বারা আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলন ঘটে চোখে এসে পড়ে। তখন তাদের ডানায় উজ্জ্বল ইন্দ্রধনুচ্ছটা দেখা যায়। তবে ডানার উল্টো দিকে এরকম কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
৩. কালার এক্সটোর্ট : এটি হল রঙ শোষণ পদ্ধতি। এক এক জাতের প্রজাপতি র ভিন্ন রঙ শোষণ ক্ষমতা ভিন্ন হয়। যে প্রজাপতি লাল হয়, সে আসলে লাল বাদে সূর্যের বাকি রঙ শোষণ করে নেয়। কেবলমাত্র লাল প্রতিফলিত হওয়ায় তার লাল রঙটাকেই দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে বাকি রঙগুলিও একই রকমভাবে প্রতিফিলত হয়ে সামনে উপস্থিত হয়।
পিগমেন্টেড, স্ট্রাকচারাল এবং কালার এক্সটোর্ট এই তিনটি পদ্ধতি একই সময়ে, একই সাথে ক্রিয়া করে যখন সামনে উঠে আসে, তখনই তাদের রঙের বাহার দেখতে পাওয়া যায়। তবে সব প্রজাপতি র ক্ষেত্রেই যে এই তিনটি পদ্ধতি ক্রিয়া করবে, এমন কোনও কথা নেই। তাহলে সব প্রজাপতি কেই একই রঙেরই দেখাত। প্রকৃতির নিয়ম মেনে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি র ক্ষেত্রে এই তিনটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর তাই প্রকৃতির বুকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় লাল, নীল, হলুদ, কমলা সাদা বা কালো রঙে প্রজাপতি দের।