লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষের শারীরিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। বিশেষ করে তাপমাত্রা এর প্রধান কারণ। তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, রুক্ষ ও শীতল জলবায়ু তুলনামূলক বৃহৎ শারীরিক আকার গঠনে সহায়তা করে। কারণ দীর্ঘাকৃতির শরীর তাপ শোষণ করতে পারে বেশি। অপরদিকে উষ্ণ জলবায়ু তুলনামূলক খর্বকায় শরীর গঠন করে। তবে শুধুমাত্র ‘হোমোজেনাস’-ই নয়, বর্তমান ‘হোমোসেপিয়েন্স’-ও যে ধরণের জলবায়ু অঞ্চলে বসবাস করছে, সেক্ষেত্রেও এই ধারণা প্রযোজ্য।

এটা নিঃসন্দেহে স্বীকার করতে হয়, লক্ষ লক্ষ বছর আগের প্রাণীদেহের আকার বা আকৃতি ছিল অনেকটা ‘দানব’ প্রকৃতির। ক্রমে সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে মানুষ সহ অন্যসব প্রাণীর শারীরিক পরিবর্তন ঘটেছে। কিছু প্রাণী আকার-আকৃতিতে পূর্বের তুলনায় খর্বকায় হয়েছে। কিছু প্রাণী আবার পূর্বের থেকে কিছুটা বৃহৎও হয়েছে। এই যেমন হাতি, তখনকার সময়ের বিশালাকৃতির ‘ম্যামথ’ এখন রূপ বদলে তৈরি হয়েছে তুলনামূলক খর্বকায় হাতি-তে।
শুধু হাতি নয়, অন্যসব প্রাণীর শারীরিক আকারের পরিবর্তনও ঘটেছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ধীরে ধীরে। এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। লক্ষ লক্ষ বছর আগের মানুষের ফসিলস পরীক্ষায় এবিষয়ে সুস্পষ্টভাবে ধারণা করা গিয়েছে, তখনকার সময়ের মানুষের পূর্ব পুরুষেরা বর্তমানের থেকে আকার-আকৃতিতে কিছুটা বৃহৎ-ই ছিল। তবে সেসময়ের মানুষের মস্তিষ্ক ছিল তুলনামূলক কিছুটা ছোটো।
কিন্তু কেন লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ বা অন্যসব প্রাণীর এতটা শারীরিক পরিবর্তন ঘটল, এই ব্যাপারটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল বিস্তর গবেষণা। সম্প্রতি এই রহস্যের কিছুটা সমাধান করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনই প্রাণীদের এই শারীরিক আকার-আকৃতি পালটে দেওয়ার জন্য দায়ী।
সিএনএন সংবাদ মাধ্যম সূত্রের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এই ধরণের গবেষণা চালিয়েছেন জার্মানির টুবিনগেন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এই গবেষণা চালিয়েছেন ৩০০-এরও বেশি ‘হোমোজেনাস’ ধরণের ফসিলস নিয়ে। গবেষণায় তাঁরা জানার চেষ্টা করেছেন, এই মানুষগুলি বেঁচে থাকাকালীন তাঁরা কোথায় ও কোন ধরণের পরিবেশে টিকে ছিল।
ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর ধারণা করতে পেরেছেন, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষের শারীরিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। বিশেষ করে তাপমাত্রা এর প্রধান কারণ। তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, রুক্ষ ও শীতল জলবায়ু তুলনামূলক বৃহৎ শারীরিক আকার গঠনে সহায়তা করে। কারণ দীর্ঘাকৃতির শরীর তাপ শোষণ করতে পারে বেশি। অপরদিকে উষ্ণ জলবায়ু তুলনামূলক খর্বকায় শরীর গঠন করে। তবে শুধুমাত্র ‘হোমোজেনাস’-ই নয়, বর্তমান ‘হোমোসেপিয়েন্স’-ও যে ধরণের জলবায়ু অঞ্চলে বসবাস করছে, সেক্ষেত্রেও এই ধারণা প্রযোজ্য।
তবে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তনের জন্য কি কারণ থাকতে পারে, তার স্পষ্ট কোনও ধারণা দিতে পারেননি। তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, ‘হোমোসেপিয়েন্স’-এর বহু আগে উদ্ভব ঘটেছিল ‘হোমোজেনাস’-এর। এক্ষেত্রে ‘হোমোসেপিয়েন্স’-এর মস্তিষ্ক প্রায় ৩ গুণ বড়ো ও ৫০ শতাংশ ভারী। তবে এই পরিবর্তনের কারণ কি, তার স্পষ্ট ধারণা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।