এমনিতেই পরিবেশের সব স্থানেই কমবেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। চাল –এর মধ্যে আর্সেনিক প্রবেশ করে মূলত জলের মাধ্যমে। চাষের সময় যে জল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে আর্সেনিক থাকলে তা সরাসরি গাছের মাধ্যমে ধান বা চাল –এ সঞ্চয় হয়। তবে পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমেও আর্সেনিক চাল –এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।

অলাইন পেপার : আপনি যতই নিজেকে সতর্ক রাখুন না কেন, শস্যের মধ্যেই যদি ভূত লুকিয়ে থাকে, আপনার কিছুই করার থাকবে না। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্যের জন্য ভাত বা চাল জাতীয় খাবারের উপর বেশি নির্ভরশীল। সেই চাল –এই যদি আর্সেনিক নামক কোনও বিষ লুকিয়ে থাকে তাহলে মানুষ খাবেটা কি!
এর আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছে চাল –এ অল্প-বিস্তর আর্সেনিক অবশ্যই থাকে। স্থানভেদে তার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে সেই আর্সেনিকের ক্ষতির পরিমাণ থাকে কম। দক্ষিণ আমেরিকা বা এশিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের জমিগুলিতে চাষ করা জমির চাল -এ আর্সেনিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। তবে সম্প্রতি গবেষণায় জানা গিয়েছে, চাল -এ এই আর্সেনিকের উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জন্য দায়ী করা হয়েছে পরিবেশ দূষণকে।
এমনিতেই পরিবেশের সব স্থানেই কমবেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। চাল –এর মধ্যে আর্সেনিক প্রবেশ করে মূলত জলের মাধ্যমে। চাষের সময় যে জল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে আর্সেনিক থাকলে তা সরাসরি গাছের মাধ্যমে ধান বা চাল –এ সঞ্চয় হয়। তবে পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমেও আর্সেনিক চাল –এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
সম্প্রতি এই গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল চিনের তিনটি আলাদা স্থানকে। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে ২৮ প্রজাতির ধান চাষ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সমস্ত স্থানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানকার চাল –এ আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়েছে।
এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আরও লক্ষ্য করেছেন, এই হারে চাল -এ যদি আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু চিনেই প্রায় ২ কোটি বাড়তি মানুষের ক্যানসার হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও এই একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আর্সেনিক দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশের একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে। পানীয় জলের মাধ্যমেই এই রাসায়নিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সবচেয়ে বেশি। এর প্রভাবে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যতটা সম্ভব পানীয় জলকে আর্সেনিক মুক্ত করে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন গবেষকেরা।
কিন্তু চাল –এর মধ্যেই যদি এই ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি বাড়তে থাকে তবে তা আর্সেনিক মুক্ত করার উপায় কি হবে? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে সাদা চাল –এর তুলনায় লাল চাল –এ আর্সেনিকের উপস্থিতি থাকে বেশি। কিন্তু লাল চাল –এ পুষ্টিগুণ থাকে অধিক পরিমাণে। তাই খাদ্যের জন্য চাল বদলের কোনও কারণ থাকতে পারে না।
গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন, আর্সেনিক মুক্ত করতে চাল –কে প্রথমে পাঁচ মিনিট গরম জলে ফোটাতে হবে। পরে সেই জল ফেলে দিয়ে পুনরায় সামান্য নতুন জল দিয়ে অল্প জ্বালে জ্বালাতে হবে। জল পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তখন রান্নার উপযুক্ত করতে হবে চাল –কে। এই উপায়ে লাল চাল থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ ও সাদা চাল থেকে প্রায় ৭৪ শতাংশ আর্সেনিক দূর করা সম্ভব।