Thursday, April 10, 2025

গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার সময় হয়েছে এবার

- Advertisement -

লকডাউনের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রত্যেকেই প্রায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। ফলে চাপ বেড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি র উপর। বিশেষ করে শহরের অর্থনীতি র উপর নির্ভরশীল মানুষেরা কাজ হারিয়েছেন সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে গ্রামীণ অর্থনীতি কে চাঙ্গা করতে কৃষি ও স্বজাতীয় শিল্প, হস্ত শিল্প, পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর অধিক বিনিয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে।


গ্রামীণ অর্থনীতি

অরবিন্দ মালী : আত্মনির্ভর শব্দের অর্থ স্বয়ংসম্পূর্ন, বা বলা যেতে পারে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়া। বর্তমান মুক্ত অর্থনীতির বাজারে সম্পূর্ণ রূপে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আত্মনির্ভর হওয়া প্রায় কোনও দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে অবশ্যই অন্য দেশের উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে ভারতবর্ষ আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। স্বয়ং গাঁধীজির স্বপ্ন ছিল এক আত্মনির্ভর ভারতবর্ষের। তাঁর আদর্শ, পন্থা, নীতি, তা সে বিদেশী দ্রব্যসামগ্রী বয়কট করাই হোক বা গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশীয় শিল্প দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো, সবই ছিল তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতি র উপর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গ্রামের মানুষের আত্মনির্ভরতার জন্য প্রথমে শিলাইদহ ও পরে শ্রীনিকেতনে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

ভারতবর্ষ এক উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দারিদ্রতা, বেকারত্ব, জনবিস্ফোরণ, অশিক্ষা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো অজস্র সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। আর তাতেই জন্ম হয়েছে দুই ভিন্ন রূপী দেশ, গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষ ও শহর কেন্দ্রিক ভারতবর্ষ। দেশের এই দুই রূপের মধ্যে পার্থক্য এতো বৃহৎ, তা কল্পনারও অতীত। উভয় রূপে মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হচ্ছে কঠিন অদৃশ্য কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে। গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষ যেখানে লড়ছে পানীয় জল, চিকিৎসা, শিক্ষার জন্য মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করে। সেখানে আধুনিকতার মোড়কে ‘গ্রোথ সেন্টার’ রূপে জন্ম নিচ্ছে শহর কেন্দ্রিক ভারতবর্ষ।

সাম্প্রতিক মারণ ভাইরাস করোনা গ্রাস করেছে সমগ্র বিশ্বকে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার প্রাণও হারাচ্ছেন। ভাইরাসকে রুখতে তাই বাধ্য হয়ে বিশ্ব জুড়ে এই মুহূর্তে চলছে লকডাউন (যদিও বর্তমানে ভারতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে)। মানুষ কার্যত প্রায় গৃহবন্দী এখন। ভারতের মতো দেশে প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। ভেঙে যাচ্ছে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। উন্নত দেশগুলি রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে। অপরদিকে কঠিন সংগ্রামে নিজের নিয়োজিত করে দাঁতে দাঁত চেপে কার্যত লড়ে যাচ্ছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিও।

ভারত সরকার ও রাজ্যসরকারগুলি মিলিতভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য। তবে দীর্ঘদিন লকডাউন চলাকালে কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় জিডিপি (GDP), এইচডিআই (HDI) ক্রমাগত নিম্নমুখী এখন। আরবিআই (RBI) আশঙ্কা করছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি ঋণাত্মক হতে পারে। এমন অবস্থায় ভারত সরকার দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশীয় শিল্প উৎপাদন ও পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে, “আত্মনির্ভর ভারতবর্ষ” পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

- Advertisement -

এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে অজস্র সমস্যা সত্বেও গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষ প্রথম থেকেই কিছুটা আত্মনির্ভর। এমনকি একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় অর্থনীতির বেশিরভাগ অবদানই ছিল গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষের। বর্তমানেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ মিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৪৬ শতাংশ অবদান রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি র। তার মধ্যে এককভাবে কৃষিক্ষেত্রের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশের মতো। কিন্তু গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষের সমস্যা শহর কেন্দ্রিক ভারতবর্ষের তুলনায় বেশ অনেকটাই বেশি। গ্রামীণ জনসংখ্যায় বেকারত্বের পরিসংখ্যান দীর্ঘ। এই এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় জীবিকা নির্বাহের জন্য।

এখন গ্রাম কেন্দ্রিক ভারতবর্ষের সমস্যা আরও বেড়েছে বলা চলে। কারণ বর্তমান লকডাউনের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া এখানকার পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রত্যেকেই প্রায় বাড়ি ফিরে এসেছেন বলা চলে। ফলে চাপ বেড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির উপর। আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে শহরের অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল মানুষেরা কাজ হারিয়েছেন সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কৃষি ও স্বজাতীয় শিল্প, হস্ত শিল্প, পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর অধিক বিনিয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বাজারজাতকরণ ফসলের সংরক্ষণ, ফসলের নূন্যতম মূল্য, বাজার ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি, সেচ ব্যবস্থা প্রভৃতিক্ষেত্রে। কৃষি ও গ্রামীণ শিল্পের জন্য সহজ ব্যবস্থায় কম সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার প্রয়োজনও দেখা দিয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত বেকারত্বের চাপ ধীরে ধীরে কমানো সম্ভব হবে।

মহিলাদের কর্মসংস্থানের উপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। জোর দিতে হবে দেশীয় উৎপাদন যেমন খাদি, তাঁত, কাঁথা স্টিচ, পাটজাত দ্রব্যসামগ্রীর উপর। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির পরিকাঠামো, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এই সময় খুবই দরকার হয়ে উঠবে। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়াও এমজিএনআরইজিএ (MGNREGA) ও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে তা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করা প্রয়োজন। কৃষকদের হাতে টাকা থাকলে শীর্ষ ঋতুতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ কাজ পাবেন, ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রামীণ উৎপাদনকে শুধু নিজেদের খাওয়া বা ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে তাকেও ব্যবসায়িক রূপ দিতে হবে। গ্রামীণ “গ্রোথ সেন্টার”-গুলিকে চিহ্নিত করে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ পণ্যচিহ্নকে মানুষের সামনে রাখা এই সময়ে খুবই দরকার।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর