আমাদের চির পরিচিত গিরগিটি দ্রুত রঙ পরিবর্তন করাতে ওস্তাদ। মূলত ৪টি কারণের জন্য তারা এই রঙ পরিবর্তন করে- নিজেকে আত্মরক্ষা, শিকারের সময় লুকিয়ে রাখা, অন্য কাউকে ভয় দেখানো এবং নিজের পছন্দের সঙ্গীকে আকৃষ্ট করা। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শুধুমাত্র দিনের আলোর উপস্থিতিতেই তারা এই বাহারি রঙের খেলায় মেতে উঠতে পারে। রাতের অন্ধকারে সাধারণত কোনও গিরগিটি ই রঙ বদলাতে পারে না।

পৃথিবীর সব প্রাণীরই নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দেখে সহজেই তাকে চিনতে পারা যায়। আবার কিছু প্রাণী আছে, যারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে নিজের প্রয়োজনে শরীরের আকার বা রঙ অথবা উভয়ই কিছুক্ষণের জন্যে পরিবর্তন করতে পারে। এই পরিবর্তন অবশ্যই নিজের আত্মরক্ষা, খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রজননের সুবিধার উদ্দেশেই করতে হয়।
আমাদের চির পরিচিত গিরগিটি দ্রুত রঙ পরিবর্তন করাতে ওস্তাদ। মূলত ৪টি কারণের জন্য তারা এই রঙ পরিবর্তন করে- নিজেকে আত্মরক্ষা, শিকারের সময় লুকিয়ে রাখা, অন্য কাউকে ভয় দেখানো এবং নিজের পছন্দের সঙ্গীকে আকৃষ্ট করা। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শুধুমাত্র দিনের আলোর উপস্থিতিতেই তারা এই বাহারি রঙের খেলায় মেতে উঠতে পারে। রাতের অন্ধকারে সাধারণত কোনও গিরগিটি ই রঙ বদলাতে পারে না।
গিরগিটি মূলত সরীসৃপ পর্বের প্রাণী। এরা প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পৃথিবীতে বসবাস করে চলেছে। অনেক প্রাণীবিদ এদেরকে আবার ডাইনোসরের ছোটো সংস্করণও বলেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত গিরগিটির প্রজাতি প্রায় ৪৬৭৫টি।
সাপেদের খুব কাছের পরিবারের সদস্য এরা। আর তাই হয়তো সাপেদের মতো এদের ঘ্রানেন্দ্রীয় জিভেই অবস্থান করছে। বেশিরভাগ প্রজাতির গিরগিটি র জিভ বেশ অনেকটাই লম্বা। নিজের পছন্দের স্বাদের সন্ধান পেলে এরা কালবিলম্ব না করে দ্রুত শিকারের ওপর নিজের জিভকে ছুড়ে দেয়। জিভের সাথে লেগে থাকা আঠালো পদার্থে খুব সহজেই শিকারে জড়িয়ে যায়। তখন গিরগিটি শিকারসহ নিজের জিভকে মুখের মধ্যে টেনে নিতে পারে, ঠিক ব্যাঙের মতো। এইভাবে শিকার ধরতে তাদের সময় লাগে ১ সেকেন্ডেরও কিছু কম। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় তাদের রঙ পরিবর্তন। কিছু প্রজাতির বাদে প্রায় সকলেই এই রঙ বদলানোর অপূর্ব কাজটি করতে পারে।
রঙ পরিবর্তনের মূল সূত্র অবশ্য তাদের ত্বকের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। ত্বকের মোট ৩টি স্তর জ্যান্থোফর, আইরিডোফর ও মেলানোফর। প্রত্যেক স্তরে আবার আলাদা আলাদা প্রকৃতির রঞ্জক পদার্থ থাকে। যা দেখতে অনেকটা তারার মতো। এই রঞ্জক পদার্থের সামান্য তারতম্য ঘটিয়ে রঙের খেলায় মেতে উঠতে পারে গিরগিটি রা।
১. জ্যান্থোফর – গিরগিটি র ত্বকের সবচেয়ে ওপরের বা বাইরের স্তরকে জ্যান্থোফর বলে। এখানে অবস্থান করা রঞ্জক পদার্থগুলি তাদের চামড়ার লাল এবং হলুদ রঙ গঠন করতে সাহায্য করে।
২. আইরিডোফর – ত্বকের দ্বিতীয় বা মাঝের স্তর এটি। এই স্তরে ‘গুয়ানাইন কেলাস’ থাকে। বরফ কুচির মতো যার কোনও রঙ হয় না। কিন্তু আলোক বিচ্ছুরণ এবং প্রতিফলনের ফলে এটি নীল এবং সাদা রঙে পরিবর্তিত হয়।
৩. মেলানোফর – ত্বকের একেবারে ভিতরের স্তর এটি। মূলত কালো রঙের। গিরগিটি র রঙ পরিবর্তনে এই স্তরের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
রঙ পরিবর্তনের সময় গিরগিটি এই ৩টি স্তরের প্রায় সবগুলিকেই এক সঙ্গে ব্যবহার করতে থাকে। মেলানোফর স্তরকে প্রসারিত করে অন্য স্তরের রঞ্জক পদার্থগুলি ঢেকে দেয়। ফলে চামড়ার রঙ কালো হয়ে যায়। আবার সঙ্কুচিত করে অন্য স্তরের রঞ্জকগুলিকে মেলে ধরতে সাহায্য করে। ফলে লাল, নীল, সবুজ সহ বিভিন্ন রঙের প্রদর্শন চলতে থাকে চামড়ায়।
গিরগিটি র শরীরের স্তরগুলি আসলে লাল, নীল ও হলুদ এই ৩টি রঙ তৈরি করতে পারে। বাকি রঙ স্তরের পরিমাণ মতো সংকোচন ও প্রসারণের ফলে প্রতিফলন এবং বিচ্ছুরণ ঘটে ওই ৩টি রঙের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। এই সমস্ত রঙ তৈরির পুরোটাই নির্ভর করে পরিবেশের আলো আর তাপমাত্রার উপর। শরীরে বিশেষভাবে গঠিত কিছু স্নায়ুগ্রন্থি পরিবেশের এই আলো আর তাপমাত্রার প্রকৃতি বুঝে রঙ পরিবর্তনের সংকেত পাঠায়। তখন ধীরে ধীরে গিরগিটি তার রূপ বদলে ফেলতে পারে। কিছু প্রজাতির গিরগিটি র আবার এই ক্ষমতা অত্যন্ত নিখুঁত। তারা পরিবেশের বিভিন্ন পদার্থের রঙের সঙ্গে এতটাই নিজেকে মিশিয়ে ফেলে যে, হঠাৎ দেখলে চিনতে ভ্রম হয়।