নোংরা-আবর্জনায় বসবাসের জন্য মনুষ্য সমাজের সংস্পর্শে এসে আরশোলা একাধিক রোগ ছড়িয়ে থাকে। তাই এদের বিনাশ করতে বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে একাধিক রকমের কীটনাশক। তবে এবার সেই সমস্ত কীটনাশকের বিরুদ্ধেও লড়তে শিখে গিয়েছে আরশোলা, জানিয়েছেন একদল গবেষক। তাঁদের মতে, জার্মান আরশোলা বা ‘ব্যাটেল্লা জার্মানিকা’ নামের এক ধরণের আরশোলা র মধ্যে তৈরি হয়েছে এই ধরণের ক্ষমতা।

আরশোলা নিয়ে যেন বিরক্তির শেষ নেই। ঘরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা মাত্রই গৃহিণীর মেজাজ যায় বিগড়ে। কীটনাশকের পর কীটনাশক স্প্রে করেও কোনও লাভ হয় না। কারণ কিছুদিন সাময়িক আরশোলা র হাত থেকে মুক্তি মিললেও পরে আবার কোথা থেকে উদয় হয়, তা ভেবে পাওয়া মুশকিল।
এদিকে আরশোলা গবেষকদের একাংশ এখন দাবি করছেন, আরশোলা দের শরীর ক্রমশ কীটনাশক বিরোধী হয়ে উঠছে। অর্থাৎ তারা উত্তরোত্তর কঠিন থেকে কঠিন কীটনাশককে হারিয়ে সমাজে নিজেদের বেঁচে থাকার কায়দা বেশ ভালো করেই রপ্ত করে নিতে পারছে। আর যদি সত্যিই এমনটি ঘটে থাকে, তবে আরশোলা র বিরুদ্ধে রীতিমতো লড়াইয়ে নামতে হতে পারে মানব জাতিকে।
এই বিশ্বে আরশোলা ই একমাত্র প্রাণী, যারা বহু ঝড়-ঝাঁপটা অথবা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্যেও কোটি কোটি বছর ধরে টিকে রয়েছে। পৃথিবীতে আরশোলা র আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৫ কোটিরও বেশি বছর আগে। কার্বনিফেরাস যুগেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ প্রজাতির মধ্যে মাত্র ৩০-৩২ প্রজাতির আরশোলা মানুষের সংস্পর্শে থাকে।
আরশোলা নিজেদেরকে এমনভাবে অভিযোজিত করেছে, পৃথিবীর সবরকম পরিবেশেই এরা টিকে থাকতে সক্ষম। উষ্ণ পরিবেশে এদের আধিক্য বেশি হলেও, গবেষণায় দেখা গিয়েছে -১২২ ডিগ্রীর শীতল পরিবেশেও এরা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারছে। এদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের নোংরা-আবর্জনা। তাই একদিকে যেমন আরশোলা র শরীর সব সময়ই ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান, অপরদিকে তেমনি নিজেদের উত্তরোত্তর অভিযোজিত করতে সক্ষম।
নোংরা-আবর্জনায় বসবাসের জন্য মনুষ্য সমাজের সংস্পর্শে এসে আরশোলা একাধিক রোগ ছড়িয়ে থাকে। তাই এদের বিনাশ করতে বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে একাধিক রকমের কীটনাশক। তবে এবার সেই সমস্ত কীটনাশকের বিরুদ্ধেও লড়তে শিখে গিয়েছে আরশোলা, জানিয়েছেন একদল গবেষক। তাঁদের মতে, জার্মান আরশোলা বা ‘ব্লাটেল্লা জার্মানিকা’ (Blattella germanica) নামের এক ধরণের আরশোলা র মধ্যে তৈরি হয়েছে এই ধরণের ক্ষমতা। প্রধানত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রতি প্রজন্মে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলে পারে এরা।
গবেষকরা গবেষণার জন্য ধাপে ধাপে ব্যবহার করেছেন বোরিক অ্যাসিড, অ্যাবামেকটিন ও থিয়ামেথোজেম কীটনাশকগুলি। পরীক্ষার সময় এক এক মাস করে এই ৩টি কীটনাশক প্রথম ৩ মাস ‘ব্লাটেল্লা জার্মানিকা’-র উপর প্রয়োগ করেছেন। ৩ মাস বাদ রেখে পুনরায় একই পদ্ধতিতে আবার এগুলি ব্যবহার করেছেন। পরের ৬ মাস ২টি কীটনাশক এবং তার পরের ৬ মাস ১টি কীটনাশক ব্যবহার করে দেখেছেন, আরশোলা র পরিমাণ তো কমানো সম্ভবই হয়নি, বরং ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।