একাধিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এক্ষেত্রে দাবি করছেন, যেহেতু নক্ষত্রগুলি অনেকটা দূরত্ব নিয়ে অবস্থান করছে, তাই একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা খুবই কম। হয়তো সংঘর্ষ হওয়ার পর এণ্ড্রোমিডা ও মিল্কিওয়ে একত্রে মিশে একটি বড়ো গ্যালাক্সিতে পরিণত হতে পারে। নতুবা সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে দুটি আলাদা গ্যালাক্সি হিসাবেই থেকে যেতে পারে। কিন্তু রাতের আকাশের পরিবর্তন অবশ্যই হবে। হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর আকাশের বর্তমান ‘রাশিচক্র’। পালটে যাবে রাতের আকাশের সম্পূর্ণ মানচিত্রও।

১৯৩০ সাল নাগাদ এডউইন হাবল ও তাঁর দল লক্ষ্য করেছিলেন, প্রতিটি গ্যালাক্সি একে-অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁদের এই ‘অবজার্ভ’ থেকে জানা গেল, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অর্থাৎ মহাকাশ ক্রমশই প্রসারিত হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে নক্ষত্র, গ্যালাক্সি সকলেই সবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
কিন্তু সেসময় একটা অদ্ভুত বিষয় তাঁদের চমকে দিয়েছিল, এই ঘটনার ঠিক উল্টোটা ঘটছে আকাশগঙ্গা ও তার পাশের গ্যালাক্সি ‘এণ্ড্রোমিডা’ বা M3 এর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে তাঁরা লক্ষ্য করেছিলেন, আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ের থেকে দূরে সরে যাওয়ার বদলে বরং দ্রুত গতিতে ক্রমশ কাছে সরে আসছে M3। তার মানে ধরেই নিতে হবে, এইভাবে কাছে সরে আসার ফলে মিল্কিওয়ে ও এণ্ড্রোমিডারের মধ্যে সংঘর্ষ কোনও একদিন হবেই। এবং এই সংঘর্ষ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এখানে এণ্ড্রোমিডা এতটাই দ্রুতগতিতে আকাশগঙ্গার দিকে ছুটে আসছে, তার গতিবেগ কল্পনার থেকেও বেশি। ওই গতিতে চললে যে কেউ ১ ঘণ্টায় চাঁদে পৌঁছে যেতে পারে। অর্থাৎ এণ্ড্রোমিডারের ছুটে আসার গতি এখন ঘণ্টায় প্রায় ২৫০০০০ মাইল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই হিসাব কষে দেখে নিয়েছেন, ওই গতিতে ছুটে এলে এণ্ড্রোমিডারের সঙ্গে আকাশগঙ্গার সংঘর্ষ হতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর। এখানে সময়টা হয়তো বেশ দীর্ঘ মনে হতে পারে মানব সমাজের কাছে, কারণ এণ্ড্রোমিডারের অবস্থান আকাশগঙ্গা থেকে প্রায় ২-৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।
এবার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সংঘর্ষ হলে কি হবে? স্তব্ধ হয়ে যাবে কী সৌরজগতের ‘সোলার সিস্টেম’? অথবা, ধ্বংস হয়ে যাবে কী এই নীল গ্রহ সহ তার প্রতিবেশী অন্য গ্রহগুলিও? এসব প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যদি ততদিন মানুষ বা পৃথিবী টিকে থাকে, তাহলেও এণ্ড্রোমিডারের সঙ্গে সংঘর্ষের কোনও প্রভাব নাও পড়তে পারে সৌরজগতের উপর। শুধুমাত্র ‘সোলার সিস্টেম’-এর স্থান পরিবর্তনের মতো কিছু পরিবর্তন হবে মাত্র।
একাধিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এক্ষেত্রে দাবি করছেন, যেহেতু নক্ষত্রগুলি অনেকটা দূরত্ব নিয়ে অবস্থান করছে, তাই একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা খুবই কম। হয়তো সংঘর্ষ হওয়ার পর এণ্ড্রোমিডা ও মিল্কিওয়ে একত্রে মিশে একটি বড়ো গ্যালাক্সিতে পরিণত হতে পারে। নতুবা সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে দুটি আলাদা গ্যালাক্সি হিসাবেই থেকে যেতে পারে।
কিন্তু রাতের আকাশের পরিবর্তন অবশ্যই হবে। হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর আকাশের বর্তমান ‘রাশিচক্র’। পালটে যাবে রাতের আকাশের সম্পূর্ণ মানচিত্রও। নক্ষত্রগুলি স্থান পরিবর্তন করবে এবং রাতের আকাশে নতুন নক্ষত্রের উদয় হবে।
পৃথিবীর রাতের আকাশে খালি চোখে যত নক্ষত্রের দেখা মেলে, তার পুরোটাই প্রায় মিল্কিওয়ে ছায়াপথের অংশ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, এর সঙ্গে এণ্ড্রোমিডা ছায়াপথ যুক্ত হলে সেই ছায়াপথের নক্ষত্রগুলিও নতুন করে দেখা দেবে পৃথিবীর রাতের আকাশে। আবার এণ্ড্রোমিডার পরিধি আকাশগঙ্গার পরিধির প্রায় দ্বিগুণ। তাই ধরেই নিতে হবে, নতুন ছায়াপথের পরিধি হবে আরও সুবিশাল।
কিন্তু সেই নতুন ছায়াপথ দেখার সৌভাগ্য হয়তো পৃথিবীবাসীর নাও হতে পারে। তবে সেই অবস্থায় সংঘর্ষের সময় বা তার পরবর্তীতে আকাশের মানচিত্র কেমন হতে পারে, সম্প্রতি নাসা তার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে। যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে।