এক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ওকল্যান্ড দ্বীপের উপকূল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত অ্যালবাটস পাখিদের। ২০০৩ সালেই এখানে প্রায় ১৬০০০ হাজার অ্যালবাটস যুগলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছে। যার অন্যতম কারণ এই বিবাহ বিচ্ছেদ। এখন প্রচুর সংখ্যক অ্যালবাটস -কে সমুদ্র উপকূলে নিঃসঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে প্রকট হচ্ছে প্রজননের অনিচ্ছা।

বছরের পর বছর ধরে অ্যালবাটস -কে নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। আর গবেষণায় প্রতিবারই উঠে আসে নতুন নতুন চমকপ্রদ তথ্য। তবে এবারের তথ্য অনেকটাই হতাশাজনক। কারণ এবারের গবেষণায় রয়েছে বিচ্ছেদের প্রতিচ্ছবি। যা যুগলের ভালোবাসাকে ভেঙে দিচ্ছে নিমেষের মধ্যে। পরিণত করছে হিংসায়।
এমনিতেই অ্যালবাটস -কে বলা হয় সবচেয়ে বড়ো সামুদ্রিক পাখি। দুই ডানার কিছুটা কালো অংশ বাদ দিলে তাদের সম্পূর্ণ শরীরটাই ধবধবে সাদা। শরীরের তুলনায় এদের ডানার দৈর্ঘ্য বেশ কিছুটা বড়ো। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, এরা দিনের পর দিন একটানা বহুক্ষণ আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে। এভাবেই দলবদ্ধভাবে উড়তে উড়তে অ্যালবাটস নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে কখনও পৌঁছে যায় দক্ষিণ মেরুর দিকে। আবার দক্ষিণ মেরু থেকে ফিরে আসে নিরক্ষীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক উপকূলে। সমুদ্র উপকূলই এদের সবচেয়ে প্রিয় বিচরণ স্থল। কারণ আহারের জন্য এখানে মাছ পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে।
সাধারণত পাখিরা প্রজননের ঋতুতেই একমাত্র জোট বাধার প্রয়োজন অনুভব করে। এই সময় স্ত্রী পাখি খুঁজে নেয় প্রজননে সক্ষম তার পছন্দের পুরুষ পাখিকে। তারপর প্রজননের ঋতু পেরিয়ে গেলে আবার বিচ্ছেদ ঘটে দুজনের। পরের প্রজনন ঋতু এলে আবার শুরু হয় নতুন সঙ্গীর খোঁজ। এভাবেই চলে পাখিদের আমৃত্যু জীবনচক্র।
এখানে ব্যতিক্রম শুধু অ্যালবাটস। কারণ কোনও যুগল একবার নিজের জীবন সঙ্গীকে বেছে নিলে তার সঙ্গেই কাটিয়ে দেয় তার সারাটা জীবন। কোনও অবস্থাতেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায় না। একে অপরের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তারা একবারের জন্যেও আলাদা হতে চায় না।
তবে এবার বিচ্ছেদ হতে বাধ্য হচ্ছে তারা। আরও ভালো করে বললে, বিচ্ছেদ হতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের। এখানে ভিলেন ‘জলবায়ু পরিবর্তন’। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সাম্প্রতিককালের গবেষণায় এমনটিই প্রমাণ পেয়েছেন ৫ জনের একদল গবেষক। সম্প্রতি রয়্যাল সোসাইটি জার্নালে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ওই জার্নাল থেকে জানা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের জল পূর্বের থেকে অনেকটাই উষ্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে মাছ শিকারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অ্যালবাটস পাখিদের। গবেষকরা দেখেছেন, এই মাছ শিকারকে কেন্দ্র করেই অ্যালবাটস যুগলের মধ্যে উত্তরোত্তর মনোমালিন্য প্রকট হচ্ছে। মনোমালিন্যের ফলেই বিচ্ছেদের ইচ্ছা জাগছে তাদের। সমুদ্র উপকূলে নিঃসঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
এক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ওকল্যান্ড দ্বীপের উপকূল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত অ্যালবাটস পাখিদের। ২০০৩ সালেই এখানে প্রায় ১৬০০০ হাজার অ্যালবাটস যুগলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবছর সেই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছে। যার অন্যতম কারণ এই বিবাহ বিচ্ছেদ। এবছরও প্রচুর সংখ্যক অ্যালবাটস -কে সমুদ্র উপকূলে নিঃসঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে প্রকট হচ্ছে প্রজননের অনিচ্ছা। গবেষকেরা আশঙ্কা করছেন, এইভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অ্যালবাটস -এর সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে।